‘আচ্ছা, সেদিন মাসুমের মাথায় কীভাবে পড়ছিল ওগুলো? গোল হয়ে? না চারকোণা? টুপটুপ করে? না কি ধুপধাপ করে?’ মা শুইয়ে দিলেই কেন জানি রাজ্যের সব সমীকরণ ঘুরতে থাকে সাজিদের মাথায়। ঘুম আর খাবার—এ দুটোতে রাজ্যের বিতৃষ্ণা যেন ওর।
অবশ্য আজকাল বড্ড ক্ষুধা লাগে। আব্বুটা বাসায় থাকে। আম্মু শুধু রুটিই বানায়। সাথে মাংস নেই, মধুও নেই। মাঝেমধ্যে যয়তুনের তেল দেয়। সাজিদের প্রতিদিন আর ভাল্লাগে না খেতে এসব। মাসুমটাও আসে না এদিকে। ও মাঝেমধ্যে চকলেট দিত।
‘ও হ্যাঁ, মাসুম।’
আম্মু তো সব জানে। কিন্তু জিজ্ঞেস করলেও জবাব দেয় না। কতবার জিজ্ঞেস করলাম, মাসুমের মাথায় কীভাবে পড়েছে। গোল করে না চারকোণা, টুপটাপ না ধুপধাপ। আচ্ছা শুধু কোণাটাই বলুক। কিন্তু আম্মু উত্তরই দেয় না। জিজ্ঞেস করলে আগে মুখ ঢেকে অন্যদিকে চলে যেত, এখন রেগে যায়।
‘আচ্ছা থাক, আমি মাসুমকেই জিজ্ঞেস করব। এখন ঘুমাই।’ মনে মনে ভাবলো সাজিদ।
আপু এসে শুয়ে পড়ল। আপুটা এখন শুধু ঘুমায়। হাসে না, কুতুকুতু দেয় না। ওর সাথে ‘কুউলুক’ খেলে না। শুধু আল্লাহর কাছে বসে বসে কাঁদে। সেদিন মাসুমের আম্মু... তাই তো? আপু তো আম্মুর চেয়েও বেশি জানে! সবজান্তা। ওকে প্রশ্ন করি।
‘আত্তা আপু, তাক্কোণা নাকি দোল দোল?’ সাজিদ অনেক আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন করল।
আপু কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থাকল। তারপর ওকে বুকে টেনে নিতে নিতে বলল, ‘ঘুমোতে গেলেই তোর সব প্রশ্ন আসে, না? আয়, আল্লাহুম্মা বিসমিকা পড়ে ঘুমিয়ে পড়। কোনো কথা নেই।’
এমনিতেই ঘুম চলে আসলো তার।
হঠাৎ করে প্রচণ্ড শব্দে ঘুম ভেঙে গেল সাজিদের। বোমার শব্দ। অনেক চিৎকার চেঁচামেচি। আকাশে বিমান দেখা যাচ্ছে জানালা দিয়ে। কী যেন পড়ছে তার নিচ থেকে। কালো কালো, লম্বাটে। বাইরে অনেক রক্ত। দরজার দিকে তাকিয়ে দেখল, মা তার দিকেই দৌড়ে আসছে।
এমন সময় মাথার ওপরে বিকট শব্দে ছাদ ভেঙে গেল। ও ওপরে তাকালো। ছাদ ভেঙে সোজা ওর ওপরেই আসছে। এমন সময় মুচকি হেসে দিল সাজিদ। তার চোখ চিরতরে বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে শেষমেশ তার জানা হয়ে গেল।
গোলই ছিল।
[ষোলো ৬ষ্ঠ সংখ্যায় প্রকাশিত]