১.

পঞ্চাশ কিলোমিটার পাড়ি দিতে হচ্ছে। বাসে সিট জানালার পাশে হোক বা না হোক, আমার তাতে কোনো অসুবিধা নেই। আমি শুধু চাই পাশে কোনো মহিলা বা মেয়ে না বসুক।

বাস কাউন্টারে দুই-আড়াই বছরের একটা বাচ্চা চিপস খাচ্ছে। আমার ভাগনি হাফসাও ঐ বাচ্চার বয়সী। হাফসা বেড়াতে আসলে বাসার চেহারাই পাল্টে যায়। বিছানা থেকে বালিশ নামিয়ে মেঝেতে রেখে দেবে, টেবিল থেকে বই নিয়ে আরেক রুমে রেখে আসবে, সব জিনিসের জায়গা অদলবদল করে ফেলবে। ও চলে গেলে বাড়িটা খাঁ খাঁ করে।

এমন সময় অনিক ভাই ফোন করলেন। সালাম দিয়ে বললেন, ‘কেমন আছো, সাদিক?’ আমি বললাম, ’আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর রহমতে ভালো আছি ভাই।’

আমরা আগে এক সাথে আরবি শিখতাম। নতুন চাকরি পেয়ে তাকে অন্য শহরে চলে যেতে হলো। তারপর দুজনেরই ব্যস্ততার কারণে যোগাযোগে ভাটা পড়ে গিয়েছে। সালাম-কুশল বিনিময়ের পর জানতে চাইলেন, ‘আরবি শেখা কেমন চলছে?’

বললাম, ‘ভালোই।’

‘মাশাআল্লাহ, আর হিফজ কতদূর?’

‘ছয় পারা শেষ হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ।’

অনিক ভাই আমার প্রশংসা-টশংসা করে নিজের জন্য আফসোস করতে লাগলেন। আজকাল সময়ই পান না। বইপত্র পড়া হচ্ছে না আগের মতো ইত্যাদি ইত্যাদি। ততক্ষণে আমার পাশের সিটের যাত্রী চলে এসেছেন। অপরিচিত কারও সামনে ফোনে কথা বলতে আমার ভালো লাগে না, বিশেষ করে বাসে। তাই আলাপের পাঠ সাঙ্গ করতে হলো।

পাশের সিটের যাত্রী সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা পরা, মাথায় টুপি। মুখে কাঁচা-পাকা দাড়ি। বয়স পঞ্চাশের কম নাকি বেশি সেটা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। দেখে বেশ শক্তসমর্থ আর সম্ভ্রান্ত মনে হয়। তবে আরেকজনের সাহায্য নিয়ে বাসে উঠেছেন। কারণ তার বাম পায়ের হাঁটুর নিচের অংশ নেই। সাথে আসা ব্যক্তিটি একটি পানির বোতল লোকটির হাতে দিয়ে বললেন, ‘চাচ্চু, আমার খুব খারাপ লাগছে, আমি তোমার সাথে যেতে পারছি না।’

‘চিন্তা কোরো না, আব্বু। আমি ঠিক পৌঁছে যাব, ইনশাআল্লাহ। আয়মান তো আছে। তুমি তাড়াতাড়ি গাড়ি ঠিক করার ব্যবস্থা করো।’ 

চাচার কথায় আস্বস্ত হয়ে ঐ ব্যক্তি নেমে গেলেন। কিছুক্ষণ পরই শুরু হলো আমার আর পাশের যাত্রীর কথোপকথন। সাধারণত আমাদের সমাজে বড়রা আগে সালাম দেন না। কিন্তু আমার পাশের যাত্রী আঙ্কেল বোধহয় সওয়াব অর্জনে বেশ তৎপর। আস্তে আস্তে অনেক কথা হলো আমাদের। কম কথা বলার স্বভাব আমার। তাই কেবল উত্তরকারী হিসেবেই ভূমিকা পালন করলাম।

আঙ্কেল পেশায় ব্যবসায়ী। তার এক মেয়ে এবং এক ছেলে। মেয়ের বিয়ে হয়েছে। গতকাল স্বপরিবারে বড় ভাইয়ের বাসায় এসেছিলেন। কিন্তু হুট করে আঙ্কেলের শাশুড়ির অসুস্থতার কথা শুনে তার স্ত্রী-পুত্র রোগীকে দেখতে চলে যায়। কথা ছিল, আঙ্কেলের ভাতিজা—যিনি তাকে বাসে তুলে দিলেন—তিনি প্রাইভেট কারে আঙ্কেলকে বাসায় পৌঁছে দেবেন। কিন্তু সকালে গাড়ি গেল নষ্ট হয়ে। এদিকে আঙ্কেলের শাশুড়ি নাকি তাকে দেখতে চাচ্ছেন। তাই তাকে তাড়াতাড়ি সেখানে যেতে হবে। আমার আগের স্টপেজে নামবেন তিনি।

‘জানো বাবা, একটা কারণে বড্ড আফসোস হয়। মুকুট পাওয়ার লোভে নিজের ছেলেকে তো হাফিজ বানিয়েছি, কিন্তু নিজের আব্বা-আম্মার মাথায় মুকুট পরানোর ব্যবস্থা করতে পারলাম না।’

ব্যাগে একটা বই আছে। ভাবছিলাম পড়া শুরু করব। আঙ্কেলের ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে আজকে আর পড়া হবে না। কিন্তু তিনি যখন কথা বলতে চাচ্ছেনই তখন আমার চুপ করে থাকাটা ভালো দেখায় না। তাই বললাম, ‘আপনি না বললেন, আপনার ছেলে এবার এইচএসসি দিবে? ছোটবেলায় মাদরাসায় পড়েছিল নাকি?

‘একজন উস্তায বাসায় এসে পড়াতেন।’

আঙ্কেলের পায়ের এই অবস্থা নিয়ে মনের ভেতর এক ধরনের কৌতূহল কাজ করছে। জিজ্ঞেস করা আদবের খেলাফ হয়ে যায় কিনা—এইভেবে চুপ করে আছি। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে আঙ্কেল নিজেই সেই বিষয় টেনে আনলেন। যা শুনলাম তা রীতিমতো ভয়াবহ ও রোমাঞ্চকর!

২.

‘বুঝলে বাবা, আল্লাহ মাঝে মাঝে বিপদকে নিয়ামত বানিয়ে দেন। এই আমার কথাই ধরো না। আজকে আমাকে অন্যের সাহায্য নিয়ে হাঁটা-চলা করতে হয়। তবুও আমি মাসজিদে নামাজ পড়তে যাই। পা থাকাকালে জুমুআর নামাজটাও পড়া হতো না। এক পা নিয়ে আল্লাহ আমাকে কত কিছু দিয়েছেন, আলহামদুলিল্লাহ।’

সংকোচ দূর করে আমি এবার জিজ্ঞেস করেই ফেললাম, ‘আঙ্কেল, একটা কথা জানতে ইচ্ছে করছে। আপনার পায়ের এই অবস্থা–এক্সিডেন্টটা কীভাবে হলো?’

‘সে অনেক লম্বা কাহিনি, বাবা। লোকে গাড়ির নিচে চাপা পড়ে পা হারায়। আর আমি...! আল্লাহ আমার পাকে মাছের খাদ্য বানিয়েছেন।’

‘কী! মাছের খাদ্য! হাঙর-টাঙর ছিল নাকি?’

‘না, হাঙর নয়। হাঙরের মতো দেখতে। টাইগার ফিশ।’

‘পিরানহার নাম শুনেছি। এই মাছের নাম প্রথম শুনলাম। কোথায় ঘটেছিল ঘটনাটা?’

‘আমাদের এদিকে সে মাছ নেই। এশিয়াতেই পাওয়া যায় না, ইউরোপ-আমেরিকাতেও নয়। আফ্রিকার মাছ এটা। আবার আফ্রিকার সব জায়গাতেও এই মাছ থাকে না। কঙ্গো নদী, লুলাভা নদী আর টাঙ্গানিকা নদীতে থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক মাছের একেকটা তোমার আমার চেয়েও বড়। লম্বায় ৬ থেকে ৭ ফুট। ওজনও প্রায় ৫০কেজি।’

‘সুবহানাল্লাহ! পৃথিবীতে আল্লাহর কত রকমের সৃষ্টি আছে। এই মাছের গায়ে বাঘের মতো ডোরাকাটা দাগ আছে নাকি?’

‘না, ডোরাকাটা দাগ নেই। তবে বাঘের মতো ৩২টি দাঁত আছে। বাঘের মতো চেহারা না হলেও বাঘের মতো আক্রমণাত্মক। বাঘ যেভাবে ঘাপটি মেরে বসে থাকে আর শিকার দেখলে দ্রুত ঝাঁপিয়ে পড়ে, টাইগার ফিশও এভাবে শিকার ধরে।’

টাইগার ফিশের কথা আমার কৌতূহল আরও বাড়িয়ে দিল। জিজ্ঞেস করলাম, ‘আঙ্কেল, আপনি আফ্রিকা গিয়েছিলেন? দারুণ ব্যাপার! আমি আফ্রিকার প্রতি একটা আকর্ষণ অনুভব করি। রহস্যময় বন-জঙ্গল! আপনার কেমন লেগেছে? আপনি কেন আফ্রিকায় গেলেন, জানতে পারলে খুব ভালো লাগত।’

মুচকি হেসে আঙ্কেল বললেন, ‘ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার ছিলাম।’

আমি তো অবাক। ‘মাশাআল্লাহ। এটা তো এক সময় আমার স্বপ্ন ছিল।’

আঙ্কেল আবার হাসলেন। ‘তাই নাকি! হ্যাঁ, অনেক ছেলেরই এমন স্বপ্ন থাকে। খুব কম জনেরই পূরণ হয়। আমাদের সময় তো আরও কঠিন ছিল। আল্লাহ তাআলা আমার ইচ্ছেটা পূরণ করেছেন।’ একটু থেমে আবার বললেন, ‘তোমাকে সবটা বলি, কী বলো?’

‘নিশ্চয়ই। আমারও খুব শুনতে ইচ্ছে করছে।’

‘আমাদের বাড়িতে সবাই পড়ুয়া স্বভাবের। দেশি-বিদেশি অনেক বই, ম্যাগাজিন থাকত আমাদের লাইব্রেরিতে। বইতে থাকা জীবজন্তুর ছবিগুলো আমাকে বেশ টানত। বন-জঙ্গল এসবের প্রতিও ছিল প্রবল আকর্ষণ। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ আমার আব্বাকে যথেষ্ট অর্থ-সম্পদ দিয়েছিলেন। অর্থ আর মন - দুদিক থেকেই ধনী ছিলেন তিনি। ইন্টারমিডিয়েটের পর বিদেশে ডাক্তারি পড়ার জন্য পাঠানো হলো আমাকে। বছর দুই ভালোভাবেই চলল পড়াশোনা। এরপর দেখা হলো জোনাথনের সাথে। সংক্ষেপে জন নামে ডাকত সবাই। জনের সাথে দেখা হওয়া...সে আরেক কাহিনি। তোমার শোনার প্রয়োজন নেই। যাহোক, জন ছিল প্রফেশনাল ওয়াইন্ডলাইফ ফটোগ্রাফার। সে-ই আমার সুপ্ত ইচ্ছাটাকে জাগিয়ে তুলেছিল।’

আমি বললাম, ‘তার মানে এই জনের সাথে আপনি আফ্রিকা চলে গেলেন? বাড়ি থেকে কোনো ঝামেলা করল না?’

‘প্রথম প্রথম মানা করেছিল। তবে আমার জেদের কাছে টিকতে পারেনি। জন বলতে গেলে একেবারে ব্রেইন ওয়াশ করেছিল আমার। মনে হচ্ছিল, জন্তু-জানোয়ারের ছবি তোলার জন্যই আমার জন্ম হয়েছে। ও একটা ভালো ম্যাগাজিনের হয়ে কাজ করত। দেখলাম, ভালোই পয়সাকড়ি কামায়। তাই অর্থচিন্তাটা মাথায় আসেনি তখন। তাছাড়া চাকরি না করলে আব্বার ব্যবসায় যোগ দেওয়ার সুযোগ ছিল, যেটা এখন করছি। তাই পরে কেউ আর আটকাল না।’

এমন সময় আম্মার কল আসলো। কথা শেষ হলে আঙ্কেলের কাছে তার আফ্রিকা ভ্রমণ আর ফটোগ্রাফির অভিজ্ঞতা শুনলাম। আমি যেমন বনেজঙ্গলে ফটোগ্রাফির স্বপ্ন দেখতাম তাঁর জীবনটা তেমনই ছিল। অনেক দিন ধরে একদল প্রাণীর ওপর নজর রাখা, মুহূর্তে মুহূর্তে ছবি তোলা। সিংহ, বন্য শূকর, ভালুক, সাপসহ নাম জানা-অজানা বিষাক্ত আর হিংস্র প্রাণীর কাছাকাছি বসবাস করা। একই সাথে অনিরাপত্তা আর নেশার মিশ্রণ।

‘তারপর একদিন, স্বপ্নময় দিনগুলোর পরে চলে এলো দুঃস্বপ্নের দিন। সেবার আমাদের টিমের ওপর টাইগার ফিশের ছবি তোলার দায়িত্ব পড়েছে। কঙ্গোতে চলে এলাম সবাই। টাইগার ফিশ খুব হিংস্র আর রাক্ষুসে, কুমিরকে পর্যন্ত খেয়ে ফেলে। কিন্তু আমরা তো পানিতে না নেমে ওপর থেকে ছবি তুলব, তাই নিশ্চিন্ত ছিলাম। টাইগার ফিশ কখনো দলবেঁধে থাকে, কখনো একা একা। আমরা কদিন ধরে একটা দলের ওপর নজর রাখছিলাম। এখনকার মতো অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকায় সে যুগে ফটোগ্রাফারদের কয়েকগুণ খাটতে হতো। একদিন আমার এক সাথি ডাঙায় নিরাপদ দূরত্ব থেকে দলটার ছবি তুলছিল। ডাঙা থেকে একটা মাত্র মাছ দেখতে পাচ্ছিলাম। আমি করলাম কী—দূরবীন নিয়ে নদীর পাড়ের একটা গাছে ওঠে গেলাম, ভালো করে দেখার জন্য। গাছ বেয়ে একটা ডালে ডান পা রাখলাম, এরপর বা পা দিতেই ডাল ভেঙে পানিতে পড়ে গেলাম। চিন্তাই করিনি গাছের ডাল এত হালকা হবে। ভয়ংকর কথা হলো, আমরা উপর থেকে একটা মাত্র মাছ দেখতে পাচ্ছিলাম কিন্তু ওরা ছিল একটা দল। পড়া মাত্রই আমি পড়িমড়ি করে ডাঙায় ওঠার চেষ্টা করলাম। ওরা বুঝতে পেরে আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইল। তবে একজন ছাড়া কেউ পারল না। সে সম্ভবত পানির নিচ থেকে বাম পা’টাকে টার্গেট করেছিল। ডাঙা কাছেই ছিল, পাড়ে প্রায় উঠেই পড়েছি এই সময় একের পর এক এমন কামড় বসালো পায়ে। চারদিকে অন্ধকার হয়ে আসলো। দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে, টেনে পানিতে নিয়ে যেতে চাইছিল। আমার আর আমার কলিগদের সাথে পেরে উঠেনি।’

মাছের কামড় কেমন লাগতে পারে ভেবে গলা শুকিয়ে আসছে। আমার কাছে পানির বোতল নেই। আঙ্কেলের কাছ থেকে পানির বোতলটা চাইতে হবে।

৩.

কিলোমিটার স্টোনে দেখলাম আঙ্কেলের গন্তব্য আর ৫ কিলোমিটার। সময় কম বুঝতে পেরে আঙ্কেল বললেন, ‘কত কথা হলো। অথচ তোমার নামটাই এখনো জানা হলো না।’

আমি বললাম, ‘আমার নাম সাদিক হাসান।’

এরপর আঙ্কেল বললেন, ‘বুঝলে বাবা সাদিক, তোমাকে দেখে বুঝতে পারছি তুমি বেশ ইলমের অধিকারী, আমলদার ছেলে। ব্যস্ততা আর অসুস্থতার ধকলে আমি নামাজ ছাড়া অন্য আমল খুব একটা করতে পারি না। তুমি এখন তরুণ। আমল করার সামর্থ্য আছে। দুআ করি, কিয়ামতের দিন যেন আরশের ছায়া পাও। আমার জন্য দুআ করবে। ইলম-আমল কিছুই তো আমার নেই। তার ওপর সারা জীবন তো ছবি তুলে বেড়িয়েছি। খুব ভয় লাগে।’

আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। প্রথম প্রথম বেশি কথা বলার জন্য আঙ্কেলের ওপর বিরক্ত হচ্ছিলাম। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, আরও কিছুক্ষণ যদি তিনি

থাকতেন! তাঁর কথা যত শুনছি তত মুগ্ধ হচ্ছি। মানুষটা কত অসাধারণ, অথচ নিজেকে কত সাধারণভাবে প্রকাশ করেন। তিনি যদি আমাকে কোনো উপদেশ দেন তাহলে খুব ভালো হয়। দেরি না করে বলে ফেললাম, ‘আঙ্কেল, দুআ করি আল্লাহ যেন আপনাকে বিনা হিসেবে জান্নাত দান করেন। একটু পরেই আপনি নেমে পড়বেন। তার আগে আমাকে যদি একটু নসীহত করতেন, খুব খুশি হতাম।’

‘তোমাকে আর কী নসীহত করব! এই বয়সের ছেলেরা কত আজেবাজে কাজ করে বেড়ায়। আর তুমি আল্লাহর ইবাদত করছ। তবে একটা কথা বলতে পারি। নিজের মনে উজবকে জায়গা দিয়ো না।’

উজব মানে কী, বুঝতে পারলাম না। আঙ্কেলকে বললাম, ‘আঙ্কেল, আপনি আমাকে যতটা মনে করছেন ততটা ইলম-আমলের অধিকারী আমি নই। এই দেখুন না, উজব মানে কী সেটাই জানি না।’

আঙ্কেল বললেন, ‘এটা কোনো ব্যাপার না। তোমার মতো বয়সে তো আমি কিছুই জানতাম না। যাহোক, উজব মানে হলো আত্মতৃপ্তি, নিজেকে বড় মনে করা। অহংকার আর উজব কিন্তু এক নয়। অহংকার মানুষ অন্যের সামনে করে। আর উজব জায়গা নেয় মনের ভেতর। দেখো, শয়তান একেকজনকে একেকভাবে ধোঁকা দেয়। তোমার দ্বারা যখন গুনাহ করাতে পারছে না, তখন তোমার মনের ভেতর এমন আত্মতুষ্টি তৈরি করতে চাইবে—আমি তো অনেক ভালো, অনেক আমল করি, অমুক তমুক আমার চেয়ে পিছিয়ে। এমন চিন্তা মনের ভেতর আসতে দিয়ো না। তুমি নিজেকে যত বড় আমলদার ভাবো, আল্লাহ তো জানেনই তুমি কেমন–ভালো নাকি খারাপ। ইবনুল কাইয়িম রহিমাহুল্লাহ বলেছেন, “যে ব্যক্তি নিজের আমলে খুশি হলো, সে আসলে তার ঐ আমল ধ্বংস করে দিল।” বুঝেছ?’

‘জি, মেনে চলার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। দুআ করবেন।’ আঙ্কেল বাস থেকে নেমে পড়লেন। জানালা দিয়ে দেখলাম, ১৭-১৮ বছর বয়সী একটা ছেলের সঙ্গে যাচ্ছেন তিনি। এই ছেলেটা নিশ্চয়ই আঙ্কেলের ছেলে। বাবা ছেলের কাঁধে ভর দিয়ে হাটছে, কী যেন বলছে আর দুজনে হাসছে—খুব সুন্দর একটি দৃশ্য। এমন দৃশ্য আজকাল চোখেই পড়ে না। পিচ্চিদেরকে বাবার হাত ধরে ঘুরতে দেখা যায় বটে, কিশোর-তরুণদেরকে বাবার সাথে হাসিমুখে দেখাটা বিরল। এক মুহূর্তের জন্য নিজের বাবাকে বড্ড মিস করছি।