আজকের কাজ কালকের জন্য রেখে দিতে দিতে পড়তে বসাই যেন আর হয়ে ওঠে না। পড়ার জন্য চেয়ার টেনে বসলেও বাড়ির কাজ বা নির্দিষ্ট কোনো বিষয় শুরু করার মতো মনোভাব থাকে না। সবকিছুই যেন কেমন ম্যাজম্যাজ লাগে—আলসেমি, ভয়, আর অনাগ্রহ ঘিরে ধরে। এমনটা আমারও হতো, আর সত্যি কথা বলতে এখনো মাঝেমাঝে হয়। এটা বেশ বাজে অভ্যাস। এ কারণে আমি জীবনে অনেক কিছু হারিয়েছি। আমাকে পস্তাতে হয়েছে বারবার।
আমার জীবনে এই তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকেই বুঝেছি, আলসেমির এই ফাঁদ থেকে বের হওয়া কতটা জরুরি। তোমরা যেন এই কষ্টটা না করো, সেজন্যই আমাদের এই ধারাবাহিক আয়োজন। গত পর্বে আমরা এই ফাঁদ থেকে বের হবার জন্য আলোচনা করেছিলাম- কাজকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করো ও নিজেকে পুরস্কার দাও (Solar Flaring Technique), ৫ মিনিট রুল, এই কাজ করব, নইলে কিছুই করব না – এই ৩ টা টেকনিক। এরই ধারাবাহিকতায় এ পর্বে আলোচনা করা হবে খুবই কার্যকরী আরও কিছু টেকনিক-
পড়তে বসা বা কোনো কাজ করার ক্ষেত্রে আমি যে অলসতা করতাম তার পেছনে একটা চিন্তা ছিল- আরে বাপরে বাপ! ঐ কাজটা করতে ৪/৫ ঘণ্টা লাগবে, এতক্ষণ পড়তে বা কাজ করতে তো অনেক কষ্ট হবে আমার। এতক্ষণ কাজ করা লাগবে এই ভয়েই আর সেই কাজ করা হতো না, বা পড়তে বসা হতো না। বা বহুকষ্টে টানা কিছুক্ষণ কাজ করার পর আর মনোযোগ ধরে রাখতে পারতাম না। তোমাদেরও এমন হয়, তাই না? কিছুক্ষণ কাজ করার পর মনে হয়, “উফফ, আর পারছি না!” ফোনের দিকে বারবার নজর যায়, ফেসবুক স্ক্রল করা লাগে, বা মনে হয় ঘুমিয়ে পড়ি!
তাহলে আমরা বুঝলাম, এতক্ষণ কীভাবে কাজ করব আমি- এই ভয় দূর করা শিখতে হবে আর শিখতে হবে কাজে দীর্ঘক্ষণ মনোযোগ ধরে রাখার উপায়!
১. ‘বিসমিল্লাহ’ বলে কাজ শুরু করো
প্রতিটি কাজ শুরু করার আগে আল্লাহর নাম নিয়ে কাজ শুরু করলে এতে বরকত আসে। ‘বিসমিল্লাহ’ বলার মধ্যে যে মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যায়, তা তোমার কাজে মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করবে।
২. কিছু দরুদ ও ইস্তিগফার পাঠ করো
কাজের ফাঁকে একটু দরুদ বা ইস্তিগফার পড়লে মস্তিষ্ক কিছুক্ষণের জন্য প্রশান্তি পায়। এটা তোমার দুশ্চিন্তা কমিয়ে মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করবে।
৩. শুরুতেই কাজের নিয়ত ঠিক করে নাও
তোমার কাজের উদ্দেশ্য কী? এটা বুঝে নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উদ্দেশ্য পরিষ্কার থাকলে কাজ করার আগ্রহ বেড়ে যায়।
৪. মাল্টিটাস্কিং কোরো না
একসাথে কয়েকটি কাজ করার চেষ্টা করলে কোনো কাজেই পুরোপুরি মনোযোগ দেওয়া যায় না। গবেষণায় দেখা গেছে, মাল্টিটাস্কিং আমাদের ফোকাস আর গুণমান দুটোই কমিয়ে দেয়। তাই একবারে একটি কাজই করো। পড়ার সময় ফোন বন্ধ রাখো।
৫. একটানা ৪৫ মিনিটের বেশি কাজ কোরো না
আমাদের মস্তিষ্ক ৪৫ মিনিটের বেশি সময় একটানা ফোকাস রাখতে পারে না। একটানা বেশি সময় কাজ করলে ফোকাস, গতি আর কাজের মান তিনটাই কমে যায়। তাই এক ঘণ্টার কাজের স্লট এভাবে ভাগ করো:
- ৪৫ মিনিট কাজ করো।
- ১৫ মিনিটের একটি ব্রেক নাও।
এভাবে কাজ করলে মস্তিষ্ক বিশ্রাম পায় এবং নতুন করে কাজে মনোযোগ দিতে পারে।
৬. পোমোডোরো টেকনিক অনুসরণ করো
পোমোডোরো হলো টাইম ম্যানেজমেন্টের একটি বিশেষ টেকনিক। তুমি কতক্ষণ কাজ করবে বা পড়বে তার উপর ভিত্তি করে নিচের যেকোনো একটা বাছাই করো-

এভাবে কাজ করলে ফোকাস ধরে রাখা অনেক সহজ হয়। তোমার মাথায় এটা রাখা যাবে না, তুমি ৪ ঘণ্টা পড়বে। তোমার মাথায় থাকবে- আমি আগামী ২৫ মিনিট পড়ব। এরপর ৫ মিনিট ব্রেক নিব। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করা লাগবে এই ভয়টা আর তুমি পাবে না। পড়তে বসতে বা কোনো কাজ শুরু করতে অলসতা করবে না। আর মাঝেমাঝে যে ব্রেক নিচ্ছ – এই ব্রেক তোমাকে চাঙ্গা করে তুলবে। দীর্ঘক্ষণ তোমার ফোকাস ধরে রাখতে সাহায্য করবে।
টাইম ট্র্যাক রাখার জন্য আবার মোবাইল ব্যবহার করতে যেয়ো না, ফাঁদে পড়ে যাবে। ঘড়ি ব্যবহার করো।
৭. ব্রেকে যা করা যাবে না
ক. সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করা
ব্রেক মানে পুরো মস্তিষ্ককে রিফ্রেশ করা। ব্রেকে যদি আবার ফোন চাপাচাপি করো তাহলে তো সমস্যা! তোমার ব্রেইনকে আরও ক্লান্ত করে তুলবে।
৮. ব্রেকে যা করা যেতে পারে
ক. চুপচাপ শুয়ে থাকো
৩-৫ মিনিট চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকো। এটা তোমার ব্রেনকে রিস্টার্ট করবে ।
খ. হালকা ব্যায়াম করো
৩-৪টি পুশআপ বা স্ট্রেচিং করলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়বে এবং মস্তিষ্ক আরও ভালো কাজ করবে।
গ. বাইরে একটু হেঁটে আসো
বাইরের বাতাস তোমার মন আর শরীর দুইটাই সতেজ করে।
ঘ. চা/কফি/পানি/খেজুর খাও
সাধারণ কিছু স্ন্যাকস বা পানীয় মস্তিষ্ককে শক্তি দেবে।
ঙ. কুরআন পড়ো বা ইস্তিগফার করো
ব্রেকের সময় কুরআন পড়া বা দুআ করার মাধ্যমে তোমার মস্তিষ্ক আর আত্মা দুটোই শান্তি পাবে। আর পাবে আল্লাহর সাহায্য।
তাহলে, এখন থেকেই এই নিয়মগুলো ফলো করতে শুরু করো। পরবর্তী লেখায় আমরা আরও কার্যকর টিপস নিয়ে আসব, ইনশাআল্লাহ!
প্রথম পর্ব - https://sholo.info/id/430
দ্বিতীয় পর্ব - https://sholo.info/id/532
[ষোলো ৮ম সংখ্যায় (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ২০২৫) প্রকাশিত]