: ওরে বাবা, আবার ঘুরতে যাওয়া! আমি যাব না, তোমরাই যাও।
আমার ছোট ভাই রাহাত। ঘুরতে যাওয়া নিয়ে ওর অসুবিধা নাই। অসুবিধাটা হলো গাড়িতে চড়া। আমরা যাচ্ছি কক্সবাজার৷ অনেকদিন পর বড়সড় ফ্যামিলি ট্যুর।
: অতদূরে যাব না। তোমরাই যাও। বাস দেখলেই আমার বমি পায়।
আমিও চাচ্ছি না ও যাক। আগের বার ঢাকা যাবার সময় হুলস্থূল পাকিয়েছিল। ওর একপাশে আমি আর আরেক পাশে এক রগচটা ভদ্রলোক। গাড়ি কিছুক্ষণ চলতেই রাহাতের বমিতে ভদ্রলোকের মাখামাখি অবস্থা। লোকটা রেগে-মেগে গাড়ি থেকে নেমে যাবার উপক্রম। আব্বু অনেক বুঝিয়ে, লোকটার শার্ট-প্যান্টের টাকা দিয়ে মিটমাট করল।
আরেকবার কুয়াকাটা যাবার সময় একেবারে দূর্বিষহ অবস্থা। গাড়ি ছাড়তে না-ছাড়তেই রাহাতের এমন বমি যে, আর থামছিলই না। কুয়াকাটা পৌঁছাতেই রাহাত সোজা হাসপাতালে ভর্তি। ৩ দিন পর সোজা বাড়ি। তাও এ্যাম্বুলেন্সে, যেন রাহাতের আর অসুবিধা না হয়।
এইবার ঘুরতে যাওয়ার কথা শুনে এই ভয়ই পাচ্ছে রাহাত। আমাদের সাথে যাচ্ছে গল্প চাচ্চু। আব্বুর ৩ ভাইয়ের সবচেয়ে ছোটজন। অনেক মজার মজার গল্প শোনায় বলে আমরা তাকে গল্প চাচ্চু ডাকি। রাহাতকে চাচ্চু বোঝাচ্ছিল বাস জার্নি কত মজার। কিন্তু রাহাত নাছোড়বান্দা। চাচ্চু বলল, বাসে বমি দূর করার কিছু মজার টোটকা আছে। রাহাত এবার মনোযোগ দিল।
চাচ্চু বলে—
১. গাড়ির সামনের দিকের সিটে বসবে। পিছনে বেশি ঝাকাঝাকির জন্য বমি হতে পারে।
২. সম্ভব হলে জানালার পাশে বসবে। জানালা খোলা রাখবে, বাইরের বাতাস ভেতরে আসতে দেবে। বাইরের প্রকৃতি উপভোগ করবে। এতে চোখ ও মস্তিষ্ক গতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে।
৩. প্রয়োজনমতো পানি খাবে।
৪. খালিপেটে ভ্রমণ করবে না। চেষ্টা করবে হালকা কিছু খেয়ে বের হতে। এতে পেটে অ্যাসিডিটি তৈরি হবে না। অ্যাসিডিটি বমির অন্যতম কারণ।
৫. আদা ও দারুচিনি খাবার হজমে সাহায্য করে। বমি পেলে আদা কিংবা দারুচিনি চিবুতে পারো। এতে সাময়িক বমি ভাব দূর করা সম্ভব।
৬. গাড়ি চলন্ত অবস্থায় বই পড়া ও মোবাইলে ব্যবহার করবে না।
৭. ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে তার দেওয়া বমির ওষুধ সাথে রাখবে।
৮. তেলযুক্ত বা ভাজা খাবার খাবে না।
৯. টকজাতীয় ফল খেতে পারো। লেবু, লেবুপাতার ঘ্রাণ শুকতে পারো। এতে বমি ভাব দূর হয়।
১০. নিয়মিত ভ্রমণ করবে। তাহলে বমি ভাব কেটে যাবে।
চাচ্চুর কথা শুনে রাহাত রাজি হলো। টোটকাগুলো মুখস্থ করতে করতে গাড়িতে উঠল।
[ষোলো জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সংখ্যায় প্রকাশিত]