‘ঈদ’ শব্দটি শুনলে তোমাদের কী কী স্মৃতি মনে পড়ে?

রমাদানের শেষ সিয়ামের বিকাল। পুরো মাস যেন চোখের পলকে পার হয়ে গেল! এক অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করছে মনে। ত্রিশ দিন ধরে যে সিয়ামকেন্দ্রিক জীবন—সুহুরে সবাই একত্রে খাওয়া, তাহাজ্জুদ পড়া, মনের চাওয়া-পাওয়া আল্লাহর কাছে বলা—সবই আজ শেষের পথে। তাহাজ্জুদে কখনো চোখ ভিজে গেলে বাসার কেউ দেখে ফেললেই লজ্জায় রেগে গিয়ে বলা, ‘এই বাসায় কোনো প্রাইভেসি নাই!’

ফজরের সময় শহরটা দেখে জোনাকির মিটিমিটি আলোর মতো হয়। মাসজিদে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। শুধু সালাত সচেতনতা নয়, সাদাকার প্রতিও এক অন্যরকম প্রবণতা চোখে পড়ে। সৎ কাজের প্রতিযোগিতা রমাদানকে উৎসবমুখর করে তোলে। মাসজিদের সামনে দরিদ্রদের দীর্ঘ লাইন, বিকেলে ইফতারের আয়োজন, কেউ উল্টো-পাল্টা কথা বললে একে-অপরকে ‘এই তোর রোজা হালকা হয়ে গেসে রে, হে হে!’ বলে ক্ষেপানো—সব মিলিয়ে রমাদানের প্রতিটি দিন স্মৃতিময়।

আজ সেই শেষ বিকেল! এরপর এক বছরের অপেক্ষা। তারাবীহ, কুরআন তিলাওয়াত, শেষ রাতে দুআ, ক্বদরের রাত খোঁজা—সবই যেন এক সুন্দর স্বপ্ন, তবু কেমন যেন একটা শূন্যতা অনুভব হয়।

ইফতারের পর মাসজিদের মাইকে ঘোষণা আসে, ‘ঈদের চাঁদ দেখা গিয়েছে, ঈদ মুবারক!’ মুহূর্তেই অনলাইনে-অফলাইনে শুভেচ্ছার বন্যা। রমাদান বিদায়ের কষ্ট ভুলে খুশিতে মুখর সবাই।

ঈদের সকাল শুরু হয় সালাত, ফিরনি, জর্দার মিষ্টি আমেজে। ছেলেরা বাবার হাত ধরে ঈদগাহে যায়, সবাই নতুন পোশাকে রাস্তায় নামে। দুপুরের পর বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশীরা একত্রিত হয়, আড্ডা জমে, ঈদের আনন্দে মেতে ওঠে সবাই।

এত সুন্দর দিন রাসূলুল্লাহর (ﷺ) জীবনে কেমন ছিল? কেমন কাটত রাসূলুল্লাহর (ﷺ) ঈদগুলো?

আজ আমরা সীরাহ থেকে ঈদের দিনের একটা মজার ঘটনা জানব।

সপ্তম বা অষ্টম হিজরি সনের ঘটনা। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এবং সাহাবিরা মদীনায় রমাদান পালন করেন। কোনো একটা ঈদের দিন হাবশীরা বর্শা ও ঢাল দিয়ে একটি আঞ্চলিক খেলা খেলত। এটা ছিল তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির অংশ। তারা মূলত আবিসিনিয়ার অধিবাসী ছিল, ‘বনু আরফিদা’ নামে পরিচিত ছিল। মাসজিদের ভেতর তাদের ঐতিহ্যবাহী বর্শা ও ঢালের খেলা প্রদর্শন করছিল।

আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা এই খেলা দেখতে যাওয়ার বায়না করলেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি খেলা দেখতে চাও?’ নবী (ﷺ) তার এই ইচ্ছাকে সম্মান জানালেন। তিনি নিজে আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে নিয়ে গেলেন খেলা দেখতে। নিজের পিছনে দাঁড় করালেন। আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা রাসূলল্লাহর (ﷺ) কাঁধে নিজের চিবুক রেখে খেলা দেখছিলেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এমনভাবে বসে ছিলেন যে, তাঁর গাল আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহার গালের সাথে লেগে ছিল।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্যে বলেন:‘হে বনু আরফিদা, তোমরা তোমাদের খেলা চালিয়ে যাও!’

কিছু সময় পর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার খেলা দেখা হয়েছে?’

আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, ‘না, আরেকটু।’

কিছু সময় পর তিনি (ﷺ) আবার জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার খেলা দেখা হয়েছে?’

আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা আবার বললেন, ‘না, আরেকটু।’

আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা খেলা দেখে ক্লান্ত হয়ে গেলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিয়ে আসলেন তাঁকে।[১]

হুম… রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কিন্তু যথেষ্ট রোমান্টিক ছিলেন, তাই না?

ঈদকে আনন্দের সাথে উদযাপন করতে ভুলবে না কিন্তু! সিয়াম পালনকারীর জন্যই ঈদ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছেয়ে উঠুক মুসলিমদের ঈদের খুশিতে। অনেকে বলে, ‘ঈদ আর আগের মতো ভাল্লাগে না, বোরিং লাগে’ ইত্যাদি ইত্যাদি। মুসলিমের ঈদ বোরিং হবে কেন?

চাঁদরাতে মেয়েরা মেহেদি দাও, ঈদের দিন ঘুরতে বের হও। এমন মানুষদের সময় দাও যাদেরকে সময় দেওয়া হয় না দৈনন্দিন কাজের চাপে। এলাকায় খেলার আয়োজন করো, রাতে না হয় বন্ধুরা বা প্রতিবেশিরা মিলে বার্বিকিউ করো। উৎসবকে উৎসবমুখর করো প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।

[ষোলো ঈদ সংখ্যা ২০২৫ এ প্রকাশিত]