- আকিফ আল জাহিন
সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা
চশমা এমন একটি আবিষ্কার, যেটি কোটি মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে। তবে একটা বিষয় কী ভেবে দেখেছ, চশমা আবিষ্কারের পূর্বে মানুষ কীভাবে চলত? এখন তো চশমা ছাড়া চলাফেরা করা প্রায় অসম্ভব। আগেকার দিনে কীভাবে তারা চলত ভাবতেই অবাক লাগে। এসো তবে, আলোচনা করা যাক সেই চশমার ইতিহাস নিয়ে।
ইতিহাস আলোচনা করার পূর্বে আমাদের যে বিষয়টা জেনে নেওয়া প্রয়োজন সেটা হচ্ছে, চোখের দৃষ্টির প্রধানত দুই প্রকারের সমস্যা রয়েছে - মায়োপিয়া (myopia) বা হ্রসদৃষ্টি এব হাইপারমেট্রোপিয়া (hypermetropia) বা দীর্ঘদৃষ্টি। মায়োপিয়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তি কাছের জিনিস স্পষ্ট দেখতে পেলেও দূরের জিনিস স্পষ্ট দেখতে পায় না। আর হাইপারমেট্রোপিয়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তি কাছের জিনিস স্পষ্ট দেখতে পায় না, তবে দূরের জিনিস স্পষ্ট দেখতে পায়। অনেকের আবার দুইটাই একসাথে হয়।
আমরা সকলেই আতশ কাঁচ (magnifying glass) সম্পর্কে জানি, যেটা দিয়ে কাছের বস্তুকে আরও বড় করে দেখা যায়। এটা হাজার বছর আগের আবিষ্কার। এটা দিয়ে আগে মানুষ সূর্যের আলোর সাহায্য আগুন ধরাত (তোমরাও চেষ্টা করে দেখতে পারো!)। যাদের হাইপারমেট্রোপিয়া ছিল তারা এই কাঁচের মাধ্যমে দেখত। উল্লেখ্য যে, আগেকার সময়ে যাদের চোখের সমস্যা ছিল সেগুলো অধিকাংশই দীর্ঘদৃষ্টি জনিত সমস্যা। সুতরাং, তাদের একটু আশা ছিল চোখের সমস্যা নিয়ে হলেও টিকে থাকার।
কিন্তু প্রশ্ন আসে, মায়োপিয়া যাদের ছিল তারা কী করত? তারা তো আর আতশ কাঁচ দিয়ে দূরের বস্তু স্পষ্ট দেখতে পারত না। ইতিহাস বলে, খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতকে রোমানরা তাদের সেনাবাহিনী থেকে মিশরীয় এক সৈন্যকে ছাঁটাই করে দিয়েছিল মায়োপিয়া থাকার কারণে। অর্থাৎ, সহজ ভাষায়, যাদের মায়োপিয়া ছিল তারা ওইরকম দূরদর্শী কোনো কাজে অংশগ্রহণ করতে পারত না। এটাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই, কেননা অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের পূর্বে বহু মানুষ মারা যেত, অ্যানেস্থেশিয়া আবিষ্কারের পূর্বেও চিকিৎসা চলত। তেমনি সে সময় যাদের মায়োপিয়া ছিল, তারা নিজেদের সমস্যা নিয়েই জীবনযাপন করত। জীবন থেমে থাকেনি।
তবে একটা বিষয় আমাদের মাথায় রাখা দরকার যে, এখনকার সময়ের মতো তখন এত মানুষের চোখের সমস্যা হতো না। আর তখন মায়োপিয়া ছিল খুব দুর্লভ রোগ। অধিকাংশই যাদের চোখের সমস্যা হতো, তাদের হাইপারমেট্রোপিয়া হতো আর এর সমাধান তখন ছিল। এখন এসব সমস্যা বেড়ে যাওয়ার পেছনে কারণ হলো মানুষ আস্তে আস্তে ছোট ছোট লেখা পড়ার দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে। যেটা তাদের দৃষ্টিকে আরও দুর্বল করে দিচ্ছে। তুমি খেয়াল করবে, শহরে যত মানুষকে তুমি চশমা পড়তে দেখবে, গ্রামে কিন্তু এত দেখবে না। এটাই কিন্তু এর কারণ।
তোমরা চোখ ভালো রাখতে সবসময় পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাবার খাবে। যেমন- পালংশাক, মাশরুম এসবে প্রচুর জিংক রয়েছে, যা চোখের জন্য খুবই উপকারি। এছাড়া ভিটামিন সি যুক্ত ফল খাবে, যা তোমার চোখের ছানি পড়া প্রতিরোধ করবে। পাশাপাশি স্মার্টফোন, কম্পিউটার কম ব্যবহার করবে। আর আল্লাহর কাছে সবসময় শুকরিয়া আদায় করবে। চোখে স্পষ্ট দেখা যে আল্লাহর কত বড় নিয়ামত, সেটা খুব খেয়াল করা যায় যদি চশমা পরা কাউকে জিজ্ঞেস করো তার কেমন লাগে!