ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানেই খুশি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বর্তমান তরুণ প্রজন্মের অনেকেই ঈদের আনন্দকে ভুলভাবে উদযাপন করে। অনেকে তো সারাদিন শুধু ঘুমায়, ঈদের দিন কিছুই নাকি ভালো লাগে না, বোর লাগে। অথচ একটু সচেতন হলেই ঈদকে সত্যিকারের খুশির উপলক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।
আমাদের উচিত ঈদের সময় এমন কিছু করা, যা সবার জন্য কল্যাণকর এবং সমাজের উপকারে আসবে। চলো, কয়েকটি উপায় দেখি যেগুলো আমরা এই ঈদে করতে পারি—
১. ঈদ উপলক্ষে খেলাধুলার আয়োজন
একঘেয়ে জীবন থেকে মুক্তি পেতে, শরীরচর্চা করতে এবং সমাজকে সুন্দরভাবে এগিয়ে নিতে খেলাধুলার কোনো বিকল্প নেই। গ্রামের বা শহরের তরুণরা মিলে ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যেতে পারে। ফুটবল, ক্রিকেট, কাবাডি, লাঠি খেলা, সাঁতার প্রতিযোগিতা, রশি টানাটানি - এরকম বিভিন্ন খেলা আয়োজন করলে তরুণদের অপ্রয়োজনীয় ঘোরাঘুরি ও বখাটেপনা কমবে এবং শরীর ও মন উভয়ই সুস্থ থাকবে। তাছাড়া হালাল বিনোদন তো থাকছেই... আর এই খেলাগুলো বিবাহিত বনাম অবিবাহিত, গ্রামের ছেলেপেলে বনাম শহর থেকে আসা ভাই-ব্রাদার এইভাবে আয়োজন করা যেতে পারো। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, খেলার সময় সতর ঢেকে রাখতে হবে এবং কোনো রকম বাজি খেলা যাবে না।
২. ঈদের আগে-পরে জনকল্যাণমূলক কাজ করা
সত্যিকারের আনন্দ তখনই আসে, যখন অন্যকে খুশি করা যায়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন—
‘সব সৃষ্টির মধ্যে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় হলো সেই ব্যক্তি, যে মানুষের উপকার করে।’ (মুসনাদু আহমাদ, ২৩৪০৮)
তাই ঈদের সময় বন্ধুরা মিলে যেসব জনসেবামূলক কাজ করতে পারি—
- নিজেদের ও কাছের মানুষজনদের কাছ থেকে নেওয়া টাকা দিয়ে এলাকার দরিদ্রদের মধ্যে ঈদ উপহার বিতরণ করা
- ঈদগাহ, মাসজিদ ও রাস্তা পরিষ্কার করা
- পরিবেশ রক্ষার জন্য গাছ লাগানো
- উন্মুক্ত জলাশয়, পুকুর, ডোবায় মাছের পোনা ছাড়া, বদ্ধ জলাশয় পরিষ্কার করা
এ ধরনের উদ্যোগ সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে এবং নিজেদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি বিকাশ করবে। তাছাড়া সমাজ ও পরিবেশের জন্য এই ধরনের কাজ গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে।
৩. দাওয়াহ ও সচেতনতা ক্যাম্পেইন
বর্তমান সময়ের তরুণদের একটি বড় সমস্যা হলো তারা সঠিক দিকনির্দেশনা পাচ্ছে না। তারা হারামকে স্বাভাবিক মনে করছে, আর হালাল কাজগুলো অবহেলা করছে। এই পরিস্থিতির পরিবর্তন করতে হবে আমাদেরকেই।
- ঈদের আগের জুমুআর খুতবায় ইমামদের সাথে কথা বলে তরুণদের করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করানো যেতে পারে।
- ঈদের খুতবায় তরুণদের নৈতিক উন্নতির জন্য কিছু সময় আলোচনা রাখা যেতে পারে।
- এলাকায় বিভিন্ন অপসংস্কৃতি এবং ঈদ উদযাপনের বিধিনিষেধ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করার জন্য ইসলামিক বক্তৃতার আয়োজন করা যেতে পারে।
- বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঈদের পর সচেতনতামূলক বিভিন্ন ক্যাম্পেইন আয়োজন করা যেতে পারে। যেমন- অশ্লীলতা ও অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে লিফলেট বিতরণ করা।[১]
- অনলাইন ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভালো কন্টেন্ট তৈরি করা।
- ঈদের সময় মানুষ অনেক বেশি কোল্ড ড্রিংক্স পান করে। তাই কোকাকোলা, স্প্রাইট, ফ্যান্টা ইত্যাদি ইসরাইল সমর্থক ব্র্যান্ডের কাটতি হয় সবচেয়ে বেশি। মানুষকে এসব পণ্য বয়কট করার জন্য লিফলেটিং, পোস্টারিং, খুতবার মতো সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন করা।[২]
- মাসজিদ বা ঈদগাহের গেইটের সামনে মাটিতে ইসরাইলের পতাকা এঁকে দেওয়া, যাতে মুসল্লিররা সেটাকে পায়ে মাড়িয়ে যেতে পারে।
- ঈদের ছুটিতে অনেকেই গ্রামের বাড়িতে যায়। এই সুযোগে সহজেই তাদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা যায়। গ্রামে যাওয়ার সময় সাথে কিছু সচেতনতামূলক লিফলেট রাখা। বাসে বা ট্রেনের মানুষদের সেগুলো দেওয়া।
৪. মাসজিদ কেন্দ্রিক বিভিন্ন আয়োজন করা
মাসজিদে কিশোর-তরুণদের জন্য বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যেতে পারে। যেমন- বই পড়া, কুইজ, হামদ-নাত, কুরআন তিলাওয়াত, ঝুড়িতে বল নিক্ষেপ ইত্যাদি। এক্ষেত্রে বন্ধুরা মিলে মাসজিদের ইমাম সাহেবের সাহায্য নিয়ে এগুলো আয়োজন করা যায়। এতে করে কিশোর-তরুণরা সুস্থ বিনোদন পাবে। সেই সাথে তারা মাসজিদমুখী হবে। মাসজিদের সাথে তাদের দূরত্ব কমবে।
৫. ডিজে কালচার ও বেপরোয়া জীবন থেকে দূরে থাকা
বর্তমানে ঈদ মানেই অনেকের কাছে ডিজে মিউজিক, মোটরসাইকেল র্যালি আর রাস্তার মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা কিংবা গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ড ঘুরাঘুরি করা। এসব হারাম জিনিসকে কেন্দ্র করে অনেকেই ঈদের প্ল্যান সাজায়। কিন্তু আমাদের প্ল্যান সাজাতে হবে কীভাবে এসব জিনিস রূখে দেওয়া যায় এবং সমাজ থেকে এসব হারাম কালচার দূর করা যায়।
- ইসলামে বাদ্যযন্ত্র হারাম করা হয়েছে। তাছাড়া উচ্চ শব্দে গান বাজানো পরিবেশ ও মানুষের জন্যও ক্ষতিকর। এই বিষয়গুলো বুঝাতে হবে।
- যারা এসব কাজ করছে, তাদের সুন্দরভাবে বোঝানো দরকার যে, এটি ইসলামবিরোধী এবং সমাজের জন্য ক্ষতিকর।
- অভিভাবক ও মুরুব্বিদের উচিত এ বিষয়ে কঠোর হওয়া এবং সামাজিকভাবে এ ধরনের কাজ বয়কট করা।
আজকের তরুণরাই আগামীর ভবিষ্যৎ। যদি আমরা এখনই তাদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে না পারি, তাহলে ভবিষ্যতে সমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে। ঈদের সময় তরুণদের গঠনমূলক কাজে ব্যস্ত রাখতে পারলে তারা হারাম কাজের দিকে ধাবিত হবে না। আমাদের উচিত সমাজের ভালো পরিবর্তনের জন্য এখন থেকেই কাজ শুরু করা।
এটাই সময়, ঈদের ছুটিতে নিজ নিজ গ্রাম বা শহরের তরুণদের নিয়ে খেলাধুলা, সচেতনতা কর্মসূচি, লিফলেট বিতরণ—এসব অ্যাকটিভিজম শুরু করার। তুমি জানো না, একেকটি কার্যক্রম কীভাবে পুরো সমাজে ঝড় তুলে দিতে পারে। তোমরা যখন এগিয়ে যাবে, তখন বাকি সবাইও তোমাদের পথ অনুসরণ করবে ইনশাআল্লাহ!
[১] লিফলেট, পোস্টারসহ সকল দিকনির্দেশনা পেয়ে যাবে এখানে - https://tinyurl.com/yrthxssj
[২] বয়কট কোকাকোলা লিফলেট - https://tinyurl.com/bdhn6e5w, মাসজিদের খতিবদের দেওয়ার জন্য - https://chintaporadh.com/id/9978
[ষোলো ঈদ সংখ্যা ২০২৫ এ প্রকাশিত]