১.
ঈদের দিন এলাকা কাঁপিয়ে নামল কিশোর গ্যাং ‘নয়ন গ্রুপ’। নয়নের নেতৃত্বে রাব্বি, সাজিদ, রোহান, আরিফ—সবাই মিলে ট্রাকে উঠল। হাতে পটকা, পকেটে লেজার লাইট, সঙ্গে ব্লুটুথ স্পিকার।
“ঈদ মানে আনন্দ, বুঝলি?” নয়ন চেঁচিয়ে উঠল। “আর আনন্দ করতে গিয়ে একটু শব্দ হতেই পারে!”
স্পিকার অন হলো, “ডিজে বাহারুল…বুম বুম বুম” শব্দে পুরো এলাকা কাঁপতে লাগল।
বাইকে উঠল রাব্বি আর সাজিদ। গলি থেকে মেইন রোডে গিয়ে তারা শুরু করল ‘শোডাউন’। এক হাতে স্টিয়ারিং, অন্য হাতে পটকা ছুঁড়ে আতঙ্ক ছড়াতে লাগল। এক বৃদ্ধ রাস্তা পার হতে গিয়ে পিছু হটলেন, এক ছোট বাচ্চা ভয় পেয়ে কাঁদতে লাগল।
এলাকার সবাই নীরবে সহ্য করছিল। কিন্তু শাহরিয়ার, গালিব, নাঈম আর আলাভি এসব মানতে রাজি ছিল না। তারা ফিসফিস করে পরামর্শ করল, “এবার ওদের একটা শিক্ষা দিতে হবে!”
২.
সন্ধ্যার পর নয়ন গ্রুপ আবার বের হলো। এবার তাদের নতুন পরিকল্পনা—পুরো পাড়ায় আতঙ্ক ছড়ানো আর চাঁদাবাজি করা।
দোকানগুলোতে গিয়ে হুমকি দিল, ‘ঈদের বখরা দে, নইলে দোকানের শাটার ভেঙে ফেলব!’
ঘড়িতে সময় ৭ টা ৩০। হঠাৎ পুরো এলাকা অন্ধকার হয়ে গেল।
গলি থেকে হঠাৎ একটা করুণ আওয়াজ ভেসে এলো—’নয়ন… রাব্বি… তোরা থাম… তোরা থাম…!’
সবার গা ছমছম করে উঠল।
একটা সাদা কাপড়ে মোড়া ছায়ামূর্তি দেখা গেল গলির মাথায়। বাতাসে কাপড় উড়ছে, সাথে একেবারে গা শিউরে ওঠা আওয়াজ!
সাজিদ ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলল, ‘ভূত!’
‘ভূত!’ বলে নয়ন দৌড় দিল। রাব্বি আরিফের হাত ধরে পেছনে টানল, ‘ভাই, বাঁচা…’
কিন্তু ঠিক তখনই মোড়ের আরেকপাশ থেকে আরেকটি সাদা ছায়া বেরিয়ে এলো!
‘যারা ঈদের রাতে শান্তি নষ্ট করে, তাদের সঙ্গে ঠিক এটাই হয়…’, কর্কশ গলায় কিছু একটা বলল।
আর দেরি না করে নয়ন গ্রুপ দৌড়াতে শুরু করল। বাইক ফেলে, ট্রাক ছেড়ে, পটকা-পটলি সব ফেলে তারা একেবারে গলির শেষ মাথা দিয়ে পালাল!
৩.
সকালের আলো ফুটতেই এলাকা শান্ত। নয়ন গ্রুপের কেউ আর বাইরে বের হয়নি।
অন্যদিকে শাহরিয়ার, গালিব, নাঈম আর আলাভি আছে দিলখুশ অবস্থায়। গলির মোড়ে দাঁড়িয়ে হাসতে হাসতে নাঈম বলল, ‘এইবার শুধু পটকা না, তোরা নিজেরাও ফাটলি!’
ঘটনা আসলে কী ঘটেছিল?
ওরা এলাকার বড় ভাই আসফি ভাইকে ফোন করে নয়ন গ্রুপের গুন্ডাবাজির ঘটনা পুরো খুলে বলে। আসফি ভাই স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিসের প্রধান প্রকৌশলী। নয়ন গ্রুপকে শায়েস্তা করার জন্য ওদের পরিকল্পনা সবিস্তারে শুনে সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যান আসফি ভাই। উনার দায়িত্ব পড়ে সন্ধ্যা ৭ টা ৩০ মিনিটে এলাকায় লোডশেডিং করার। চারপাশ অন্ধকার হয়ে যাবার এই সময়টাতে শাহরিয়াররা ভূত সেজে নয়ন গ্রুপকে ভয় দেখায়।
এইভাবে, বুদ্ধির খেলা দিয়ে এলাকা শান্তির পথে ফিরে গেল, আর নয়ন গ্রুপের ঈদবাজি হয়ে গেল শুধুই এক ভয়াবহ স্মৃতি!
পরদিন এলাকাবাসী যখন জানল কারা এই ভূতের নাটক সাজিয়েছে, তারা শাহরিয়ার, গালিব, নাঈম ও আলাভিকে বাহবা দিল। এলাকাবাসী বুঝল, সাহস নিয়ে একবার অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ালে অন্যায়কারীরা লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যায়।
[ষোলো ঈদ সংখ্যা ২০২৫ এ প্রকাশিত]