আলহামদুলিল্লাহ, আমরা অনেক আনন্দের সাথে ঈদ করতে পারব। চাঁদরাতে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে পারব, ঈদের সকালে পুকুর দাপিয়ে গোছল করতে পারব। সুন্দর জামাকাপড় পরে, পরিপাটি হয়ে দলবেঁধে ঈদগাহে যাব। বিকেলে হয়তো খেলাধুলা বা ঘুরাঘুরিও করব।

ঈদ যে একটি অপরিসীম আনন্দের দিন, সব বেদনা ভুলে গিয়ে খুশি থাকার দিন, সেটা আমরা ভালোমতোই উপলব্ধি করতে পারব। কিন্তু এই একই আকাশের নিচে, একই পৃথিবীর বুকে আমাদের শত সহস্র ভাইবোনের ঈদ আনন্দে কাটবে না। তাদের ঈদ কাটবে এক বুক বেদনা আর মৃত্যুর মিছিলের সাথে।

বলছি ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী গাযযা উপত্যকার মুসলিমদের কথা। কয়েক দশক ধরে নিয়মিত বিরতিতে তাদের উপর গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার ইয়াহুদিরা। ফলে সেখানকার মুসলিমদের জীবনে যেন ঈদ আসেই না। শেষ কবে যে তারা ঈদ ‘উদযাপন’ করেছিল, সেটাও হয়তো তাদের মনে নেই।

দেড় বছর যাবৎ অভিশপ্ত ইসরাঈলিরা গাযযার মুসলিমদের ওপর ধ্বংসযজ্ঞ চরমে উন্নীত করেছে। আঠারো মাসে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে গাযযার জনবসতি থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ-হাসপাতাল—সব!

আগে থেকেই ছন্নছাড়া জীবনে অভ্যস্ত গাযযাবাসীর জীবন এতে একদমই এলোমেলো হয়ে যায়। বাস্তুহারা সকলের জীবন এসে গড়ায় শরণার্থী শিবিরে। কিছুদিন আগেও ঈদে যাদের সাথে একসাথে খেলেছে, কোলাকুলি করেছে, তাদের কেউ আর বেঁচে নেই। খেলার সাথি নেই, খেলনা নেই। কারও কারও পরিবারের একজন ব্যতীত কেউ বেঁচে নেই। কী করে তারা ঈদ উদযাপন করবে?

চাঁদরাতে যে রাস্তা তাকবীরের ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠত, বাজারগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় লেগে থাকত, সেখানে আজ কোনো মানুষ নেই, কোনো বাজার নেই। আছে শুধু ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া লাশের মিছিল। কে সেখানে ঈদের তাকবীর দেবে?

অর্ধলক্ষের বেশি মানুষকে যেখানে পৃথিবী থেকে বিদায় করে দেওয়া হলো, সেখানের মানুষ কীভাবে ঈদ উদযাপন করবে? লাশের কাতারে দাঁড়িয়ে কি ঈদ উদযাপন করা যায়?

হ্যাঁ, তারাও একদিন ঈদ উদযাপন করবে। তাদের শিশুরাও একদিন দলবেঁধে খেলতে বেরুবে। তারা কোনো বোমারু বিমানের ভয় করবে না।

সেদিন তাদেরকে কোনো ধ্বংসস্তূপের নিচে ঈদ করতে হবে না। জলপাইবনের দেশে সেদিন কোনো অভিশপ্ত বানরের বাচ্চা অবশিষ্ট থাকবে না। বিইযনিল্লাহ! সেদিন খুব দূরে নয়!

“যুদ্ধের মধ্যেও আমি দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ—পৃথিবীর অন্য সব শিশুর মতো আমিও একদিন ঈদ উদ্‌যাপন করব। আমরাও ঈদে আনন্দ করব, ইনশাআল্লাহ।” - নাবিল সামি আল সারুরা, ১০ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি বালক

সেদিন আমরা একসাথে ঈদ উদযাপন করব, ইনশাআল্লাহ!

[ষোলো ঈদ সংখ্যা ২০২৫ এ প্রকাশিত]