জুলাই আমাদের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ নাম। ২০২৪ সালের এই মাসে এক মহাকাব্যিক রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা পতন ঘটিয়েছি এ ভুখণ্ডের লেডি ফিরআউন শেখ হাসিনার সরকারকে।
জুলাই আমাদের জীবনে হঠাৎ করে আসেনি। এক যুগেরও বেশি সময়ের জুলুমের ধারাবাহিক প্রতিক্রিয়ার সম্মিলন ঘটে জুলাইতে। জালিম হাসিনার পতনের আন্দোলনে ঝাঁকে ঝাঁকে রাস্তায় নেমে আসে মানুষ। গ্রেফতার কিংবা বুলেটের ভয়ে পিছপা হয়নি কেউ। ইস্পাত-দৃঢ় অবিচলতা নিয়ে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত রাজপথে থেকেছে। জালিমের পতন নিশ্চিত করে তবেই ঘরে ফিরেছে।
জুলাই আন্দোলনের অনেক স্মৃতি আছে, যেগুলো আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। গৎবাঁধা জীবনের ব্যস্ততায় ভুলে গেলেও মনে করিয়ে দিতে হবে বারংবার।
ষোলো ম্যাগাজিন শুরু থেকে সেই স্মৃতিগুলো ধরে রাখতে নানাভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা চাই, কিশোর-তরুণরা যেন তাদের বীরত্বের ইতিহাস ভুলে না যায়। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সিনা টান করে দাঁড়ানোর ইতিহাস যেন তাদের দৃশ্যপটে থাকে।
জুলাইয়ের স্মৃতি সংরক্ষণে ষোলো ম্যাগাজিন যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, সেগুলো একটু উল্লেখ করি।
১. জুলাই আন্দোলন নিয়ে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ
হ্যাঁ, তোমার হাতে থাকা এই বিশেষ সংখ্যাটিই জুলাই আন্দোলনের স্মৃতিকে ধরে রাখার এক ক্ষুদ্র প্রয়াস। এতে রয়েছে জুলাই আন্দোলনের রোমহর্ষক ইতিহাস, আহতদের বীরত্বগাথা, শহীদ পরিবারের সাক্ষাৎকারসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ লেখা—সহজ ভাষায়, হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার মতো করে। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে হাজারো কিশোর-তরুণ আওয়ামী জাহিলিয়াতের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল; বহু তাজা প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত এই মুক্তির ইতিহাস আমরা ভুলতে পারি না।
তাই জুলাই আন্দোলনের স্মৃতি সংরক্ষণের জন্যই আমরা এই বিশেষ সংখ্যাটি প্রকাশ করেছি। এতে জুলাই যোদ্ধাদের ঈর্ষণীয় ত্যাগের গল্প পড়ে তোমরা জুলুম রুখে দেবার সাহস ও অনুপ্রেরণা পাবে, ইনশাআল্লাহ।
২. ম্যাগাজিনের নিয়মিত সংখ্যায় লেখা ও প্রচ্ছদ
বিশেষ এই সংখ্যার পাশাপাশি ষোলো ম্যাগাজিনের নিয়মিত সংখ্যাগুলোতেও জুলাই আন্দোলন নিয়ে এক বা একাধিক লেখা নিয়মিত ছাপানো হয়। জুলাইয়ের চেতনা বা ঘটনা, কিংবা জুলাই-পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে আলোচনা উঠে আসে সেসব লেখাতে।
পাশাপাশি দুটি ধারাবাহিক সংখ্যার (৭ম ও ৮ম) প্রচ্ছদেও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে জুলাই অভ্যুত্থানকে। জুলাই আন্দোলনে গণহত্যাকারীদের বিচারের দাবি নিয়ে জোরালো আহ্বানও ছিল এ দুটি সংখ্যায়।
৩. স্লোগান সংরক্ষণ
জুলাই আন্দোলনে অনেক শক্তিশালী কিছু স্লোগান উঠে এসেছিল। “চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার”, “তুমি কে? আমি কে? রাজাকার, রাজাকার”, “পা চাটলে সঙ্গী, না চাটলে জঙ্গী”, “For every Firaun a Musa will be born” ইত্যাদি। এই স্লোগানগুলো আন্দোলনকে অনন্য মাত্রা দিয়েছিল।
এগুলো নিছক কিছু শব্দ ছিল না, এগুলো ছিল আমাদের আবেগ ও বিশ্বাসের প্রতিচ্ছবি। ছাত্র-জনতার মুখে মুখরিত সেই স্লোগানগুলো ষোলো ম্যাগাজিনে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। ষোলো জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সংখ্যার পাতায় স্লোগানগুলো খুবই সুন্দরভাবে হাইলাইট করা হয়েছিল।
৪. আহতদের আর্থিক সহযোগিতা
আল্লাহর রহমতে ষোলো ম্যাগাজিন টিম আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার সুযোগ পেয়েছে। জুলাই আন্দোলনের আহত বীরদের আর্থিক সহযোগিতা করতে পেরেছি আমরা। মাসরুর’স গ্রুপের অনুদানে ৬০ জন জুলাই যোদ্ধাকে প্রায় নয় লক্ষ টাকার আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
সহায়তাপ্রাপ্তদের কেউ গুলিবিদ্ধ হয়েছিল, কেউ ছুরির আঘাতে আহত হয়েছিল। এই মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানোকে আমরা দায়িত্ব মনে করেছিলাম। কারণ, তাদের রক্তের বিনিময়েই তো হাসিনা রিজিমের কবল থেকে মুক্ত হতে পেরেছি।
৫. ফেসবুকে অ্যালবাম তৈরি
ষোলো ম্যাগাজিনের ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেইজে জুলাই আন্দোলনের নানা স্মৃতি ধরে রাখা হচ্ছে। আন্দোলনের বিভিন্ন ঘটনার ছবি-ভিডিও, সাক্ষাৎকার, জুলাই স্লোগান, পোস্টার—এসব নিয়ে অ্যালবাম তৈরি করা হয়েছে। যেন যেকেউ যেকোনো সময় আন্দোলনের ছবি-ভিডিওগুলো দেখতে পারে।
৬. জুলাই যোদ্ধাদের সাক্ষাৎকার
জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া কিছু সাহসী কিশোর-তরুণের সাক্ষাৎকার নিয়েছি আমরা। তারা কীভাবে আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিল, কেন যুক্ত হয়েছিল, গ্রেফতার-মৃত্যুর শঙ্কা সত্ত্বেও রাজপথে অনড় থাকার অনুপ্রেরণা কীভাবে পেয়েছিল—এসব গল্প তুলে এনেছি তাঁদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার মাধ্যমে।
স্মৃতি কেবলই অতীত নয়, ভবিষ্যতের অনুপ্রেরণাও
জুলাই আন্দোলনের স্মৃতি ধরে রাখার উদ্দেশ্য কেবল ইতিহাস সংরক্ষণ নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য শক্তি তৈরি করা। ষোলো ম্যাগাজিন চায়, কিশোর-তরুণরা যেন জীবনের সর্বক্ষেত্রে সত্যের পক্ষে অবস্থান ধরে রাখে। জালিমের হুঙ্কারে যেন পিছপা না হয়। অন্যায়ের বিরুদ্ধে তারা যেন প্রতিবার সামনের কাতারেই অবস্থান নেয়।
জুলাইয়ের স্মৃতি সংরক্ষণে ষোলো ম্যাগাজিনের এই কাজগুলো চলমান থাকবে ইনশাআল্লাহ। আমরা বিশ্বাস করি—সত্য কখনো হারিয়ে যায় না, মানুষকে তার ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিতে হয় কেবল। সেই কাজটাই ষোলো ম্যাগাজিন করে যাচ্ছে ও যাবে, ইনশাআল্লাহ।