ক্যাম্পেইনের হাতেখড়ি
গত পর্বে তোমাদের সাথে কথা হয়েছিল এই সমাজের সমস্যাগুলো নিয়ে। কীভাবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে পুরো প্রজন্ম, তা তোমাদের মনে করিয়ে দিয়েছিলাম সেখানে। তোমরা সেখান থেকে বুঝতে পেরেছিলে, সমাজ পরিবর্তনে তোমাদের কিছু করণীয় আছে। কিন্তু সেটা একা একা কীভাবে এত কম বয়সে করবে, তা তোমরা জানো না। তোমাদের মধ্যে একটা দ্বিধা কিংবা জড়তা কাজ করে এক্ষেত্রে। ভয় নেই, আমরা তোমাদের পাশে আছি। সবকিছু জানিয়ে দিব, বুঝিয়ে দিব। তবে সমাজকে পরিবর্তন করার দায়িত্বটা কিন্তু তোমাকেই নিতে হবে।
আমরা এবার মূল পয়েন্টে আসি। শুরুতে কীভাবে তুমি সমাজ পরিবর্তনে ভূমিকা রাখবে?
সদিচ্ছা : সমাজ পরিবর্তনের জন্য আমাদের শুরুতেই নিজের সাথে সৎ হয়ে জিজ্ঞাসা করতে হবে, আমি আসলেই এই নষ্ট সমাজের পরিবর্তন চাই কিনা?
যদি আমি মন থেকেই এটা চেয়ে থাকি, তবে এটার জন্য সত্যিকারের পদক্ষেপ নিতে পারব। কিন্তু যদি মনের মধ্যে এই চাওয়াটা না থাকে তবে অলসতা লাগবে, শয়তান ধোঁকা দিবে এবং বিভিন্ন দোহাই দিয়ে এই কাজে আমার নামা হবে না। তাই নিজের ইচ্ছাকে আগে ঠিক করে নাও।
কর্মক্ষেত্রে সফল হওয়ার শর্ত : কোনো কাজে নামার আগে মনে রাখা লাগবে, দুটো জিনিস তোমার মধ্যে থাকলে তুমি সফল হবে। ইখলাস এবং ইহসান। ইখলাস হলো, তুমি কাজটা শুধুই আল্লাহকে খুশি করার জন্য করছো। এটা অন্তরের বিষয়। নিজের সাথে নিজে যাচাই করে নিবে, এই সমাজের পরিবর্তন তুমি কেন চাচ্ছ। মানুষের কাছে হিরো সাজার জন্য, মানুষের প্রশংসা পাবার জন্য নাকি আল্লাহকে রাজি খুশি করার জন্য? আর ইহসান হলো, কোনো কাজ করার ক্ষেত্রে তোমার হাতে থাকা সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে তুমি চেষ্টা করেছ কিনা। সবচেয়ে সুন্দরভাবে গুছিয়ে কাজটি করতে চেয়েছ কিনা।
ক্যাম্পেইন : ক্যাম্পেইন হলো, কিছু মানুষ একত্র হয়ে একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণে ধারাবাহিকভাবে নির্দিষ্ট কিছু কাজ করে যাওয়া। অর্থাৎ সমাজের কোনো পরিবর্তনের জন্য, কিছু মানুষ একত্রে নিয়মতান্ত্রিকভাবে কিছু কাজ করবে।
ক্যাম্পেইনের হাতেখড়ি : কীভাবে তুমি একা একা শুরু করবে ক্যাম্পেইন? না, একা একা করতে হবে না। তোমার কয়েকজন বন্ধুকে সাথে নাও। তাদেরকে বলো, এই সমাজের দুরাবস্থা পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের কিছু করতে হবে। আশা করি তাদেরকে তুমি বোঝাতে পারলে, তারা তোমার সাথে একমত হবে। তাদেরকে সাথে নেওয়ার পর কয়েকজন বড় ভাই কিংবা অভিভাবক বা তোমাদের কোনো শিক্ষককে জানাবে - তোমরা এই কাজগুলো করতে চাচ্ছ। তখন তাদের কেউ কেউ খুশি হবে, কেউ কেউ মানা করবে। যারা খুশি হবে, তাদেরকে সাথে রাখবে পরবর্তী কাজের সময়। সাথে রাখা বলতে যেকোনো কাজের সময় তাদেরকে জানিয়ে রাখবে। এতে করে তারা যেহেতু বয়সে বড়, তাই তারা তাদের অভিজ্ঞতা থেকে তোমাদের সাহায্য করতে পারবে বুদ্ধি দিয়ে, টাকা দিয়ে, সমাজে তাদের পরিচিতি কাজে লাগিয়ে। ধরো, তুমি তোমার স্কুলের/কলেজের কিছু ছেলেকে লিফলেট দিতে চাচ্ছ। এটার জন্য যদি প্রধান শিক্ষক বা প্রিন্সিপালের অনুমতি লাগে, সেটা ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন, এমন একজন শিক্ষকের সাথে সম্পর্ক তৈরি করবে।
বিষয়বস্তু এবং ম্যাটেরিয়ালস : ক্যাম্পেইন নিয়ে আমাদের একটা ধারণা আছে যে, খুব বড় কিছু করা লাগবে। তখন দেখা যায়, এত বড় কাজ আঞ্জাম দেওয়ার মতো সামর্থ্য আমাদের থাকে না। তার চেয়ে সামর্থ্যের মধ্যে ছোট ছোট কাজ দিয়ে শুরু করতে হবে। হারাম রিলেশনের বিরুদ্ধে ‘আকাশের ওপারে আকাশ’, ভালোবাসা দিবসের বিরুদ্ধে ‘ভালোবাসার ফেব্রুয়ারি’ নামের লিফলেট লস্ট মডেস্টি ফেসবুক পেইজ থেকে পাওয়া যায়। মাত্র ২০০ টাকা থাকলেই তুমি ১০০ টা লিফলেট কিনতে পারবা। এতে করে খুব কম খরচেই তুমি ১০০ জন মানুষের কাছে অশ্লীলতা থেকে ফিরে আসার আহ্বান করতে পারলে।
বড় কাজ না করে, এই ছোট কাজ করে কী লাভ হবে? একটা কথা আছে -
ছোট ছোট বালুকণা,
বিন্দু বিন্দু জল,
গড়ে তোলে মহাদেশ
সাগর অতল।
ছোট কাজ দিয়ে শুরু করলেই বড় কাজ করতে পারবে সামনে। কেউ ক্লাস ওয়ান থেকে এক লাফে ক্লাস ফাইভে উঠতে পারে না। মাঝের ক্লাসগুলো পার হতে হয়। এই কাজগুলোর ক্ষেত্রেও বিষয়টা এমন। তাছাড়া তুমি এই কাজগুলো করে সেসবের ছবি ফেসবুকে আপলোড দিলে, অনেক মানুষই তাতে অনুপ্রাণিত হয়ে তাদের এলাকাতেও করবে। তখন তুমি তাদের কাজের জন্যও সওয়াব পাবে, যেহেতু তোমার কাজ দেখে তারা কাজ শুরু করেছে। এছাড়া তুমি এই ছোট কাজ ভালোমতো প্রচার করলে, তোমার কাজে অনেক সহযোগী তৈরী হবে। কেউ কায়িকশ্রম দিয়ে তোমাকে সাহায্য করতে চাইবে, কেউ তোমাকে অর্থায়ন করতে চাইবে। এভাবেই তুমি ছোট কাজকে বড় কাজের দিকে নিয়ে যেতে পারবে।
ষোলো ম্যাগাজিন নিয়েও তুমি চাইলে ১০০ টাকার মধ্যে ক্যাম্পেইন শুরু করতে পারো। ২ টা ষোলো ম্যাগাজিন কিনে পাঠচক্র আয়োজন করো বন্ধুরা মিলে। পাঠচক্র হলো, অনেকজন মিলে গ্রুপ আকারে বসে কোনো কিছু পাঠ করা। তো যাই হোক, এই পাঠচক্রের ছবি তুলবে। তুলে ফেসবুকে পোস্ট করবে সেই ছবি। তারপর সেখানে লিখে দিবে, আমরা অমুক জায়গায় ষোলো ম্যাগাজিন নিয়ে ক্যাম্পেইন করতে চাই। যারা যুক্ত হতে চান, আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। কেউ কেউ যুক্ত হবে। কেউ কেউ আর্থিক সহায়তা করবে। এভাবে আস্তে আস্তে আরেকটু বড় ক্যাম্পেইন হাতে নিতে পারবে।
তুমি চাইলে তোমার ক্লাসের বন্ধুদের মধ্যে একটা কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে পারো। সেই কুইজে যারা সঠিক উত্তর দিতে পারবে, তাদের মধ্যে ২ জনকে ষোলো ম্যাগাজিন পুরস্কার দিলে। তারপর ছবি তুলে ফেসবুকে দিয়ে দিলে। অনেক মানুষ জানলো বিষয়টা। পরবর্তীকালে তারা তোমার কাজে সাহায্য করবে এটা দেখে। খুব কম খরচে তুমি এভাবে অনেক চমৎকার ক্যাম্পেইন আইডিয়া বের করতে পারবে।
সামনে শীত আসছে। শীত আসলেই একটা উৎসবের কথা খুব মনে পড়ে। থার্টি ফার্স্ট নাইট অ্যান্ড নিউ ইয়ার সেলিব্রেশন। এগুলোতে মানুষজন অনেকসময়ই আড্ডা-মাস্তির নাম করে খারাপ এবং অশ্লীল কাজে যুক্ত হয়ে যায়। তোমরা চাইলে কয়েকজন বন্ধু মিলে এগুলোর বিরুদ্ধে পোস্টার লাগাতে পারো। পোস্টার বা লিফলেটের লিংক ক্যাম্পেইননামা নামক লেখায় পাবে। অল্প পরিমাণে কিনে নিয়ে দেয়ালে দেয়ালে আঠা দিয়ে লাগিয়ে দিবে। তারপর ছবি তুলবে। তুলে ফেসবুকে দিবে, অন্যদের উৎসাহ দিবে। সাথে যুক্ত হতে বলবে।
তোমাদের অনেক বন্ধুরাই মোবাইল ফোনে প্রচুর আসক্ত। তারা সারাদিন মোবাইলে গেইম খেলে। তাদের এই মোবাইল আসক্তি তাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাদের ভালো থাকার দায়িত্বটা তোমাকে নিতে হবে। স্ক্রিন-আসক্তি নিয়ে সবার কাছে লিফলেট বিতরণ করতে পারো। ১০০ টা কিনলেও অনেক জন মানুষের কাছে যেতে পারলে। ২০০ টাকা নিবে হয়তো। এভাবেই কম খরচে তুমি অসাধারণ অনেক ক্যাম্পেইন করে ফেলতে পারো।
এই পর্ব থেকে শিখে কী কী ক্যাম্পেইন করেছ, সেটার ছবি অবশ্যই আমাদের দিবে। ষোলোর ফেসবুক পেইজে পাঠাবে। আমরা দেখতে চাই, তোমরা যে আসলেই সমাজ পরিবর্তন করতে পারো। কারণ তোমরাই ভবিষ্যতে এই কওমের হাল ধরবে।
(চলবে ইনশাআল্লাহ…)
[ষোলো জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সংখ্যায় প্রকাশিত]