(১)

রুহির বিয়ে ঠিক হয়েছে আজ থেকে ঠিক এক মাস আগে। অক্টোবরের আঠারো তারিখে। পাত্র মুহিব ওর সাথে একই ভার্সিটিতে পড়ত। দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ওদের। পড়াশোনার পাট না চুকিয়ে দুজনের কেউই বিয়েটা করতে চাচ্ছিল না। তাই বিয়েটা আটকে ছিল এতদিন। 

মুহিব উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলে। শিক্ষিত, সুদর্শন। ওর বাবা আজমল হোসেন রিটায়ার্ড আর্মি অফিসার। সমাজে উনার ভালো নামডাক আছে। সবাই বেশ শ্রদ্ধা করে। রুহি প্রথম দিকে এসব কিছুই জানত না। মুহিবকে কাছের বন্ধু হিসেবেই একদিন ওদের বাড়িতে এনেছিল। রুহির আম্মা আমিনা বেগম প্রশ্ন করে এসব কথা জেনেছিলেন৷ এরপর থেকে বলা চলে, মুহিব একরকম জামাই আদরই পেয়েছে ওদের পক্ষ থেকে। 

রুহির বাবা, সিকান্দার সাহেব ব্যবসায়ী মানুষ। তিনি মেয়ের খোলামেলা সম্পর্ক অতটা পছন্দ না করলেও মুখের ওপর আদরের মেয়েকে কিছু বলতে পারেননি। এ যুগের ছেলেমেয়ে, না জানি কী করে বসে! এসব আশংকায় তার বুক কাঁপত। সেই মেয়ে যখন নিজ থেকেই বিয়ের কথা তুলল, উনার বুক থেকে যেন একটা পাথর নেমে গেল। মুহিবের মতো ছেলেকে পাত্র হিসেবে পাওয়া, বিশেষ করে আজমল হোসেনের পরিবারের মতো একটা পরিবারে তাদের কলিজার টুকরা মেয়েটা বউ হয়ে যাবে, ভাবতেই তিনি আনন্দে আত্মহারা হলেন। 

বিয়ের কথা পাকাপাকি হলেও আকদের দিন তারিখ ঠিক করা হয়নি। বেয়াইন সাহেবের এক কথা, বিয়ে পড়ানো হয়ে গেলে তারা আর মেয়েকে বাপের বাড়ি রাখবেন না। একেবারে তুলে নেবেন। কিন্তু অনুষ্ঠান ছাড়া কি মেয়ে তোলা যায়? সেই অনুষ্ঠানের দিন তারিখই ঠিক করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

আজ অনেকদিন পর সিকান্দার সাহেব বাসায় আছেন। গত দেড় মাস একটা প্রজেক্টের কাজে দৌড়াদৌড়ি করতে করতে আর কিছু নিয়ে ভাবার সময় পাননি। কনভেনশন সেন্টারে এখনো খোঁজ নেওয়া হয়নি বলে রুহি কিছুটা রুষ্ট।

মেয়ের অভিমান ভাঙাতে তিনি জোরে জোরে ডাক দিলেন, রুহি মা, কোথায় গেলি? খেতে আসবি না?

রুহি সকাল সকাল বিরস মুখে খাবার টেবিলে এলো। বাবা মেয়ের অভিমানী চেহারা খুব ভালোভাবেই চেনেন। 

‘কী রে মা, তোর কি মন খারাপ?’

‘মন খারাপ হলেই বা কী? আমার কথা কি কেউ ভাবে?’ রুহির কণ্ঠে অভিমান ঝরে পড়ল।

‘ভুল হয়ে গেছে রে, মামনি। কিন্তু আর ভুল হবে না। আজ আমরা সবাই মিলে রুহির বিয়ের কনভেনশন সেন্টার খুঁজে বের করব!’

‘তাই?’ রুহি উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলল। 

‘জানো বাবা, মুহিবরা কনভেনশন হল অলরেডি বুক করে ফেলেছে।’

‘কই, বলিসনি তো আগে।’ আমিনা বেগম প্রশ্ন করলেন। 

‘হ্যাঁ মা, ছয় মাস পরে ডেইট পেয়েছে।’ 

‘বলিস কি! আমাদের তো তাহলে সেভাবেই ডেইট নিতে হবে!’

‘আহা, তুমি চিন্তা কোরো না রুহির মা, আমরাও এখন থেকে পুরোদমে কাজে লেগে যাব। সেন্টার পেতে ঝামেলা হবে না, কী বলিস আয়ান?’

মৃদুভাষী আয়ান বাবার কথা শুনে মাথা দুলিয়ে সায় জানায় খালি। আয়ান এ পরিবারের একমাত্র ছেলে, রুহির চাইতে দু বছরের ছোট।

বিয়ের অনুষ্ঠানের নানা প্ল্যান-পরিকল্পনা করতে করতে নাস্তা পর্ব শেষ হলো। নাস্তা শেষেই রুহি তার লম্বা লিস্ট হাতে হাজির। এখানে সে তার সবগুলো পছন্দের কনভেনশন সেন্টারের নাম লিখে রেখেছে। আয়ান আড়চোখে তাকিয়ে দেখল, বোনের চোখেমুখে উচ্ছ্বাস ঠিকরে পড়ছে। সারা বাড়িতে উৎসব উৎসব একটা ভাব। এর মাঝে আয়ান বরাবরের মতোই চুপচাপ, সবার নজরের আড়াল হয়েই রইল। রুহি যেমন চটপটে, উচ্ছল, মিশুক, যেখানেই যায় ঝরনার মতো চারপাশে আনন্দ ছড়িয়ে দেয়। আয়ান ঠিক ততটাই নীরব, অদৃশ্য, ভিড়ের মধ্যে ওকে আলাদা করে চেনা যায় না। ওদের পরিবারেও রুহির বিশেষ একটা কদর আছে, আয়ান সবার ছোট কিংবা চাপা স্বভাবের কারণে অত গুরুত্ব পায় না। আমিনা বেগম তো তাকে ঝাড়ির ওপরই রাখেন। সম্প্রতি ভার্সিটি উঠে হুজুর হয়ে যাওয়াতে সেই বকাবাজির পরিমাণ আরেকটু বেড়েছে। 

একে একে ফোন করে অনেকগুলো সেন্টারে খোঁজ নেওয়া হলো। দেড়-দুই বছরের আগে সুবিধাজনক কোনো ডেইট পাওয়া গেল না। মুহিবদের বাবা রিটায়ার্ড আর্মি অফিসার হওয়াতে তারা সেনা কনভেনশন হলে সহজেই বুকিং দিতে পেরেছে। রুহিদের জন্য এমন কোনো স্পেশাল ফ্যাসিলিটি নেই। 

সিকান্দার সাহেবের একান্ত ইচ্ছা দ্রুতই বিয়ে এবং অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়ে যাক। তিনি গলা খাকারি দিয়ে বললেন, ‘রুহি মা, এই সেন্টারটা বুকিং দিয়ে দিই? কোয়ালিটি ভালো, ডেইটও পাওয়া যাবে ছয় মাসের ভেতর।’ 

না বাবা, এটার আশেপাশে একটুও খোলামেলা না। 

আশেপাশে খোলামেলা দিয়ে কী হবে? ভেতরের স্পেইসটা যথেষ্ট বড়৷ আমাদের সব গেস্টের জায়গা হয়ে যাবে।

উঁহু বাবা, তুমি কিচ্ছু বুঝো না। বিয়ের দিন আমরা একটু ফটোসেশন করব না? একটু খোলামেলা জায়গা না হলে ছবি ভালো আসবে না। 

বাধ্য হয়ে সিকান্দার সাহেব বললেন, ঠিক আছে। তাহলে অন্য একটা দেখি। 

হুম, আমি যেগুলো দিয়েছি ওগুলো থেকেই কিন্তু নিতে হবে। আদুরে স্বরে বলল রুহি, দরকার হলে আমি মুহিবকে বলে ওদের ডেইটও পিছিয়ে নেব। লাগলে আরো দুই বছর ওয়েট করব কিন্তু আমার সুন্দর সেন্টারই চাই। 

আমিনা বেগম মেয়ের কথা শুনে চোখ কপালে তুললেন, দুই বছর! এসব কী বলিস তুই? এতদিন পর হবে বিয়ে? 

হুঁ, ভালো সেন্টারের জন্য লাগলে দুইটা বছর ওয়েট করব! প্রবলেম কী? 

মা তার আধুনিক মেয়ের সাথে যুক্তিতে পারবেন না বুঝে ছেলের কাছে গিয়ে বললেন, তুই একটু তোর বোনকে বোঝালেও তো পারিস। এত দেরিতে বুকিং দিতে চাচ্ছে, কেমন কথা! 

আয়ান ধীর স্বরে বলল, মা, এতকিছু ছাড়াই তো বিয়ে করা যায়। খালি খালি এত বড় অনুষ্ঠান করারই কোনো দরকার নেই৷

হুহ, মেয়ের বিয়ের সময় কিছুই করব না এটা কিছু হলো? সামাজিকতা বলেও তো একটা ব্যাপার আছে। আমিনা বেগম ঝামটা দিয়ে উঠলেন।

এসব কথা আয়ান আগেও অনেকবার শুনেছে। ও জানে, তর্ক করে লাভ হবে না, তাই চুপ করে রইল। সিকান্দার সাহেব সব দেখেও না দেখার ভান করলেন। ছেলের এসব নতুন নতুন চিন্তা তার কাছে খুবই বাড়াবাড়ি মনে হয়। প্রচুর জাঁকজমক আর আড়ম্বরের সাথেই মেয়ে বিয়ে দিতে চান তিনি। 

আমিনা বেগম কোনো সুরাহা করতে না পেরে রুহির বান্ধবীকে ফোন লাগালেন। ওপাশের কথা শোনা না গেলেও কী বলা হচ্ছে আন্দাজ করা গেল। 

হ্যাঁ রে মা, কেমন আছো?

একদিন বাসায় আসো না কেন?

ওহ তুমি ঢাকায় নেই এখন? কবে ফিরবে মা? 

তোমার বান্ধবীর বিয়ে ঠিক হলো জানো তো মা, কিন্তু ওই পক্ষ আবার আকদের সাথে সাথে মেয়ে ঘরে তুলবে। তো একটু ধুমধাম না করে কীভাবে মেয়ে দিই বলো? 

অনুষ্ঠান করতেই চাচ্ছি। কিন্তু হল তো পাওয়াই যাচ্ছে না।

সেটাই রে মা, তুমিই ওকে একটু বোঝাও। 

বান্ধবীর পরামর্শ বা যে কোনো কারণেই হোক, রুহিকে শেষমেশ একটা সেন্টারের ব্যাপারে রাজি করানো গেল। সেটার ডেইটও এক বছর পর। যাক, তবু সময়টা খুব দীর্ঘ না। এক বছর দেখতে দেখতে চলে যাবে ভেবে সিকান্দার সাহেব নিজেই নিজেকে প্রবোধ দিলেন।

(২)

রুহির শখ ইন্ডিয়া থেকে তার বিয়ের শাড়ি কিনবে। ওদের মতো ডিজাইন আর কোয়ালিটি কাপড় নাকি দেশে পাওয়া যায় না। ও বাচ্চা মেয়েদের মতো আবদার তুলল, মা চলো না সামনের মাসে আমরা ইন্ডিয়া যাই। 

সিকান্দার সাহেব মেয়ের কোনো ইচ্ছা অপূর্ণ রাখেন নি। তিনি হাসিমুখেই অনুমতি দিলেন। ঠিক আছে, চলো ঘুরেই আসি। রুহির বিয়ের শপিংটাও হবে, আর আমাদের বুড়ো-বুড়িরও একটু হানিমুন হয়ে যাবে। আমিনা বেগম স্বামীর কথা শুনে সলজ্জ হাসলেন। এত বছর সংসারে এসেও স্বামীর সাথে ঘোরাঘুরির সুযোগ হয়নি। সংসারের প্রথম দিকে অসুস্থ শ্বশুড়ের দেখাশোনা করতে গিয়ে কোথাও যেতে পারেননি, আর পরবর্তীকালে ছেলেমেয়েদের দিকে তাকিয়ে নিজেদের সাধ-আহ্লাদ বিসর্জন দিয়েছেন।

এবারের প্রজেক্ট থেকে সিকান্দার সাহেবের ভালো প্রফিট আসার কথা। তিনি কনভেনশন হল বুকিং দিয়ে দিলেন। এছাড়াও আনুষঙ্গিক খরচের কথা চিন্তা করে বারো লাখ টাকা লোন নিয়ে রাখলেন৷ উনার যা ইনকাম তাতে কয়েক মাসের ভেতরেই লোন পরিশোধ করতে পারার কথা। কিন্তু সিকান্দার সাহেব জানতেন না, উনার বিজনেস পার্টনারই উনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে। এক মাসের ভেতর উনার ব্যবসার চিত্র পুরোপুরি পাল্টে গেল। বিশ্বস্ত পার্টনার রাইভাল বিজনেসের সাথে হাত মেলানোতে সিকান্দার সাহেবের বড় রকমের লস হলো। উনাদের জমানো যা টাকাপয়সা ছিল, রুহির জন্য গহনা বানাতে তার বেশিরভাগ খরচ হয়ে গেছে। সামনে অনুষ্ঠান, এখনো আরও অনেক খরচ বাকি। সিকান্দার সাহেবের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ল। ব্যবসার যে অবস্থা তাতে টেনেটুনে সংসারের খরচ হয়তো চালিয়ে দেওয়া যাবে, তবে অনুষ্ঠান খরচের যোগান দেওয়া ভীষণ রকমের কঠিন হয়ে যাবে। 

মেয়েকে কথা দেওয়া ছিল ইন্ডিয়াতে শপিং করতে দেবেন। সিকান্দার সাহেব তার কথা রাখলেন। তবে উনার নিজের আর যাওয়া হলো না৷ স্ত্রীকে ঘোরানোর ইচ্ছেটা চাপা দিয়ে আদর্শ বাবার মতো মেয়ের বিয়েকেই প্রাধান্য দিলেন। খরচ বাঁচাতে ছেলে আয়ান আর উনার নিজের যাওয়া বাতিল করে দিলেন৷ 

সিদ্ধান্ত জানাতে মেয়েকে ডাক দিলেন, রুহি মা, শপিং এ পুরুষ মানুষের গিয়ে কী কাজ? তাছাড়া নতুন প্রজেক্টের কাজও অনেক বাকি। তোরা মা-মেয়ে মিলে ঘুরে আয়, কী বলিস?

কী বলো বাবা, আমরা চারজন মিলে গেলে কত মজা হতো! 

এবার পারব না মা, পরে আবার প্ল্যান করব। আর আয়ানেরও তো ক্লাস বাদ দিয়ে যেতে হতো। ওরও এখন এত ঘুরে কাজ নাই।

বোনের বিয়ের জন্য ওরকম দু-চার দিন ক্লাস বাদ দিলে কিচ্ছু হবে না, গোমড়া মুখে বলল রুহি। 

মেয়ে যখন এত করেই বলছে, চলো না একসাথে ঘুরে আসি। 

না রুহির মা, তোমরা ঘুরে এসো। আমি পরের বার যাব। হোসাইন ভাইয়ের সাথে কথা বলেছি। উনাদের বাসায় উঠবে তোমরা, ওখানে ভাবি আছে, কোনো সমস্যা হবে না।

স্বামী যাবে না শুনে আমিনা বেগমের মন খারাপ হয়েছিল। কিন্তু স্বামীর মুখের দিকে তাকিয়ে তার মনে দুঃখের বদলে দুশ্চিন্তা ভর করল। উনি কিছুদিন ধরেই টের পাচ্ছিলেন, স্বামী কিছু একটা যেন গোপন করছেন। সে রাতে একটু চেপে ধরতেই সিকান্দার সাহেব তার ব্যবসার কথা জানালেন। আমিনা বেগমের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। ইন্ডিয়া শপিং এখন তার কাছে গলার কাঁটার মতো মনে হচ্ছে।

রুহি প্ল্যানমাফিক তার মায়ের সাথে ইন্ডিয়া গেল। সব কেনাকাটা সম্পন্ন করে দেশে ফিরল। 

দেশে ফিরে রুহির আনন্দ দেখে কে? একদিন দল বেঁধে রুহির বান্ধবীরা ঘুরতে এলো। সবাই ওর শাড়ি দেখে প্রশংসায় পঞ্চমুখ। 

ইশ, শাড়ির ম্যাটেরিয়ালটা দ্যাখ, কী সফট!

উফ রুহি, তুই এমনিও যা সুন্দরী, এই শাড়ি পরলে সব নায়িকা ফেইল।

বান্ধবীদের কথা শুনে রুহি খুশিতে গদগদ হয়ে বলল, যাহ, তোরা যে কী বলিস। আমার টেনশনে রাতে ঘুম হয় না। অনুষ্ঠানের দিন দেখা যাবে ডার্ক সার্কেল আর পিম্পলের মাঝখানে আমাকে দেখাই যাচ্ছে না!

কেন, কেন, কীসের এত টেনশন তোর? 

আর বলিস না, এখনো ফটোগ্রাফার খোঁজা বাকি, মেইক-আপ আর্টিস্টের বুকিং দেওয়া হয়নি। কত যে কাজ! 

আসলেই রে। জলদি বুক করে দে, নাহলে প্রফেশনালগুলাকে পাবি না।

একে একে রুহির বান্ধবীরা চলে গেল। রাতে খাবার টেবিলে আমিনা বেগমও বান্ধবীদের কথা তুলে উদ্বিগ্ন স্বরে বললেন, অ্যাই রুহি, তোর ফ্রেন্ডরা না বলছিল জলদি বুকিং দেওয়ার কথা। তুই বুকিং দিচ্ছিস না কেন? পরে যদি কাউকে খুঁজে না পাস? 

হ্যাঁ মা, জলদিই বুকিং দিব। আমার যে মেইক-আপ আর্টিস্টকে পছন্দ উনার লাইন পেতে ছয় মাস লাগে! 

তাই? এতদিন? 

হ্যাঁ মা, অনেক সুন্দর মেইক-আপ করায় উনি! 

প্রাইস কেমন?

এক লাখ টাকা৷ 

এত বেশি কেন? সিকান্দার সাহেব প্রশ্ন করলেন। 

রুহি উত্তেজিত কণ্ঠে বলল, হবে না! উনি দেশের সেরা মেইক-আপ আর্টিস্ট। বাকিদের মতো ভূত সাজায় না। আমি তো উনার থেকেই মেইক আপ করাব।

সিকান্দার সাহেব গম্ভীর হয়ে গেলেন। আগের মতো আর আসরটা জমল না।  

সে রাতে আমিনা বেগম স্বামীকে বলেই বসলেন, রুহিকে তোমার বিজনেসের কথা বলব? 

সিকান্দার সাহেব স্ত্রীর প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বললেন, রুহির মা, আমাদের বিয়ের দিনের কথা মনে আছে? আমার আম্মার দেওয়া লাল টুকটুকে একটা শাড়ি পরে তুমি বউ সেজে বসে ছিলে। কী যে অপূর্ব লাগছিল তোমাকে! ঐ রাতেই তোমাকে তুলে আনলাম। আমাদের সংসার শুরু হলো। কী সহজ ছিল তখন তাই না?

আমিনা বেগম স্বামীর মনের অবস্থা বুঝতে পারেন। লোন নেওয়া সিকান্দার সাহেবের স্বভাববিরুদ্ধ। তিনি আজীবন ভালো ইনকাম করেছেন। কারও কাছে হাত পাতেননি, পারলে বরং আত্মীয়-স্বজনকে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন। আজ মেয়ের খুশির জন্য সেই মানুষটাকে এত টাকা ঋণের বোঝা মাথায় নিতে হলো। 

স্বামীকে হালকা করতে তিনি বললেন, চিন্তা কোরো না। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এই লোন শোধ হয়ে যাবে। আমিনা বেগম ভেবেছিলেন, মেয়েটাকে বিয়ের আগে আর এসব টেনশনে জড়াবেন না, কিন্তু স্বামীর দিকটা ভেবে মত বদলালেন। মনে মনে ঠিক করলেন, মেয়ের সাথে এবার কথা বলবেন।

(৩)

রুহি, মা, তুই জানিস কার্ড ছাপাতে গিয়ে তোর বাবার লোন নিতে হয়েছে। 

কী যে বলো মা, কার্ডের আর এমন কী প্রাইস!

শুধু কার্ড না, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের টাকাও লাগত। তুই তো জানিস তোদের বাবার বিজনেসের অবস্থা ভালো না। গত কয়েক মাস একটা প্রজেক্ট থেকেও প্রফিট আসেনি। 

ওহ মা, এত টেনশন করতে পারো তোমরা। কত টাকা লোন হয়েছে বাবার?

বারো লাখ। তোর অনুষ্ঠানের জন্য যদি আরও কিছু করা বাকি থাকে, তাহলে আরো লোন নিতে হবে। 

আমিনা বেগম আশা করছিলেন লোনের কথা শোনার পর মেয়ে নিজে থেকেই কিছু ব্যাপারে ছাড় দেবে। কিন্তু তার আশায় জল ঢেলে রুহি উল্টো বলে উঠল, মা, বিয়ে কি মানুষ বারবার করে? এখনো তো সবচাইতে ইম্পর্ট্যান্ট জিনিসগুলাই বাকি, রুহির কন্ঠে হতাশা ঝরে পড়ল। বিয়ের দিন কি আমি সাজব না? হাতে মেহেদী লাগাব না?

সাজবি না কেন? তুই তো এমনিতেই সুন্দর, মেইক-আপ আর্টিস্টের কাছে না গিয়ে কোনো পার্লারে সাজলেও তোকে মানাবে।

কী বলো এসব? রুহি আর্তনাদ করে উঠল। মা, তুমি জানো মুহিবরা ওদের অনুষ্ঠানের জন্য প্রফেশনাল কোরিওগ্রাফার ভাড়া করেছে। আমি তোমাদের দিকটা ভেবে এসব কিছুই চাইনি। এখন কি নিজের বিয়েতে ভালো করে সাজতেও পারব না? 

রুহি সারাদিন মুখ ফুলিয়ে রইল। অনুষ্ঠানের দিন যত ঘনিয়ে আসছে ততই রুহির অস্থিরতা বাড়ছে। ওর অনেক সাধের অনুষ্ঠান। কত স্বপ্ন দেখেছে এই বিয়ের অনুষ্ঠান ঘিরে। কী পরবে, কোথা থেকে সাজবে, কীভাবে পোজ নিয়ে ছবি তুলবে। মুহিবদের তো সব রেডি। আর ওদের বাসার দিকে তাকালে কান্না পায়। বিয়ের অনুষ্ঠান নিয়েও এত হিসাবপত্র আর ভালো লাগছে না ওর। অভিমানে সেদিন রাতে কিছুই খেল না রুহি। 

মেয়ের আবদারের কাছে পরাজিত হয়ে আমিনা বেগম ভাবতে বসলেন কীভাবে টাকা ম্যানেজ করা যায়। সামনের মাসে ছেলেটার সেমিস্টার ফি-ও যোগাতে হবে। কী বিশাল টেনশন! ওদিকে স্বামীকে আর চাপ দেওয়ার ইচ্ছাও উনার নেই। মানুষটা খাটতে খাটতে জান দিয়ে দিচ্ছে। একদিকে মেয়ের শখ, অন্যদিকে স্বামীর চিন্তা করতে করতে নিজের নাওয়া-খাওয়া ভুলে গেলেন তিনি। অনেক ভেবেও কোনো কূলকিনারা খুঁজে পেলেন না। রাতে ঘুম হলো না, অনিয়মে আর দুশ্চিন্তায় দু দিনেই ডায়াবেটিস বেড়ে গেল। 

রুহির ভাই আয়ান সবই এতদিন ধরে দেখে আসছে। পরিবারে সবার ছোট হওয়াতে ওর গুরুত্ব এমনিও কম ছিল, এখন সিরিয়াসলি ইসলাম পালন করার কারণে অন্যদের সাথে দূরত্বটাও বেড়েছে। কেউই তার মতো করে কিছু বুঝতে চায় না। চোখের সামনে বাবার দুশ্চিন্তা, মায়ের অসুস্থতাকে বাড়তে দেখে আয়ানের খালি আফসোস হয়। ইশ, আপুটা যদি একটু বুঝত। নিজের বোনের জন্যেও মায়া হয় আয়ানের। পিকচার পারফেক্ট অনুষ্ঠানের স্বপ্নে বিভোর হয়ে নিজের বিয়েটা খালি খালিই দেরি করছে তার অবুঝ বোনটা। আয়ান ভাবল রুহিকে বোঝানোর একটা লাস্ট ট্রাই করবে। 

আপু, একটু ভেতরে আসব? বোনের দরজায় আলতো টোকা দিয়ে প্রশ্ন করল আয়ান।

আয় না, এত পারমিশন নেওয়ার কী আছে?

আয়ান দরজা খুলে ভুবনভোলানো একটা হাসি দিলো। আপু, তুমি জানো, ভরদুপুরে মায়ের ঘরে ঢুকতেও পারমিশন নিতে হয়। 

তাই? আজব তো। 

হুম। 

আচ্ছা আয়ান, বল তো আমাকে কোন লুকটায় বেশি সুন্দর লাগছে। ল্যাপটপ ঘাটতে ঘাটতে কয়েকটা পুরোনো ছবি সামনে আনলো রুহি।

আয়ান এসবে জড়াতে চায় না, ছোট করে বলল, আমি তো কোনো ডিফরেন্সই পাচ্ছি না। সবগুলো ছবিতে তোকে একই রকম লাগছে।

উহ আয়ান, তুই না একটা ইউজলেস... হাল ছেড়ে দিলো রুহি, নিজের ভাইকে ওর চেনা আছে। 

বোনকে খুশি করতে আয়ান বলল, তোকে সবসময়ই সুন্দর লাগে।

নিজের প্রশংসা শুনে রুহি কিছুটা গলল।

আপু, তুই কি বুঝতে পারছিস আব্বু-আম্মুর উপর দিয়ে কত প্রেশার হচ্ছে।

কী করব আমি আয়ান বল? মানুষ কি বারবার বিয়ে করে? 

না, তা করে না। তবে অনুষ্ঠানও এত বড় হওয়া ঠিক না যেটার জন্য টাকা ধার করা লাগে। 

তুই আমাকে কথা শোনাতে এসেছিস? 

ঠিক শোনাচ্ছি না, বোঝাতে চাচ্ছি আপু। আব্বুর লোন হয়ে যাচ্ছে। মেয়ে হিসাবে তুই এই দিকটা দেখবি না? 

আমারও তো শখ-আহ্লাদ আছে আয়ান। তুই তো বিয়ে করিসনি, তোর বিয়ের সময় হলেই বুঝতে পারবি।

আয়ান ওর বোনের কথা শুনে মুচকি হাসলো। রুহিকে বুঝিয়ে লাভ নেই বুঝে ও আমিনা বেগমের কাছে গেল। তিনি চুলায় রান্না বসিয়ে মাত্রই ড্রয়িং রুমে এসে বসেছেন। 

মা, বলছিলাম কি আব্বুর তো ভালোই লোন হয়ে যাচ্ছে। 

হ্যাঁ রে আয়ান, লোন হলেও এত টেনশন ছিল না। কিন্তু তোদের আব্বার বিজনেসটাই আগের মতো চলছে না। 

লোন কবে ফেরত দিতে হবে আইডিয়া আছে?

শিওর না, তোর আব্বাকেই জিজ্ঞেস করিস।

হুম। খানিক ইতস্তত করে আয়ান বলল, মা, তোমরা আপুকে থামাচ্ছ না কেন? ও তো ভালো একটা পার্লার থেকেও সাজতে পারত। সবকিছুর বেস্ট সার্ভিসটা অ্যাফোর্ড করার মতো সিচুয়েশন এখন আমাদের নেই। 

ও বুঝলে তো হতোই বাবা! ওর সেই পছন্দ করা মেইক-আপ আর্টিস্ট, হেনা আর্টিস্ট, ফটোগ্রাফার সবই লাগবে। তোর বোন কেমন জানিস না তুই?

আয়ান চুপ করে রইল। বোনকে ছাড় দিতে দিতেই যে আজ এ অবস্থা, এসব বলে আর তর্কে জড়াতে ইচ্ছে হলো না।

আমিনা বেগম বললেন, সামনে তোর সেমিস্টার ফি দিতেও হয়তো তোর বাবাকে আবার লোন নিতে হবে।

সে নিয়ে অত চিন্তা করো না মা। আমি ফ্রিল্যান্সিং করে টুকটাক টাকা জমিয়েছি, হাফ ফি দিতে পারব। বাকি হাফ দেখি বন্ধুদের কারও থেকে নিয়ে ম্যানেজ করা যায় কিনা। 

আমিনা বেগমের বুক থেকে যেন একটা ভারি পাথর নেমে গেল। ছেলেটা কবে এত বড় আর দায়িত্বশীল হয়ে গেল, উনি টেরই পাননি। অনেকদিন পর মনখুলে ছেলের জন্য দুআ করলেন তিনি। আল্লাহ তোকে অনেক বড় করুক, বাবা!

মনে মনে আমীন বলে নিজের ঘরে চলে গেল আয়ান। 

(৪)

রুহির বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হলো। ধুমধাম করে ডিজে পার্টি ডেকে নাচগান হলো। শহরের সবচেয়ে নামকরা ফটোগ্রাফার ডেকে দুইদিন আগে থেকেই ফটোসেশন শুরু হলো। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব, শ্বশুরবাড়ির লোকজন সবাই প্রশংসায় ভেসে গেল। বউয়ের যেমন রূপ, তেমনই রুচি। পরীর মতো সুন্দর লাগছিল রুহিকে। নিত্যনতুন কায়দায় পোজ দিল জামাই-বউ। ওদেরকে নিয়ে ভিডিও বানানো হলো সিনেমার গানের সুরের সাথে। আয়ান এসব কিছুতেই অংশ নিতে পারেনি। নিজের বোনের বিয়েতেও পর্দার পিছেই রয়ে গেল সে। 

বিয়ের কিছুদিন পর নতুন বরের সাথে ঘুরতে গেল রুহি। গন্তব্য সুইজারল্যান্ড। স্বপ্নের দেশ যাকে বলে। রুহির ফেসবুক, ইন্সটা ভরে গেল নির্মল সুন্দর সব ছবিতে। জল টলোমলো নদী, বরফের টুপি পরা পাহাড়ের সারি, আর তার সামনে রুহি-মুহিব দুজনকে দেখতে মনে হতো পোস্টকার্ডের কোনো ছবি। বিয়ের অনুষ্ঠানের পর থেকেই একের পর এক প্রফেশনাল ছবি দেওয়াতে রুহির সোশাল মিডিয়ার রীচ অনেক বেড়ে গেছে। চমৎকার সব কমেন্ট, আপু তোমাকে খুব সুইট লাগছে, গর্জিয়াস কাপল, মেইড ফর ইচ আদার। কিন্তু সুইজারল্যান্ড থেকে ফিরে দুজনের গন্তব্য দুই মেরুতে গিয়ে ঠেকল। রুহি উঠল ওর বাপের বাড়িতে। আর মুহিব ফিরে গেল ওর বাসায়। 

প্রথম কিছুদিন রুহি থম মেরে থাকল। বাবা-মা কারও প্রশ্নেরই জবাব দেয় না। অনেক চাপাচাপির পর আমিনা বেগম মেয়ের সংসারের রহস্য উদঘাটন করতে পারলেন। মুহিবের প্রচণ্ড রাগ। এই মেজাজের কথা রুহি বিয়ের আগে টের পায়নি। শ্বশুরবাড়িতেও তাদের বেশ কয়েকবার লাগালাগি হয়েছে। কিন্তু সুইজারল্যান্ড গিয়ে সে রাগ সীমা ছাড়িয়েছে। তার আদরের মেয়ের গায়ে হাত তুলেছে জামাই। 

আমিনা বেগম এ কথা শুনে ভেঙে পড়লেন। তবে সিকান্দার সাহেব সব জেনেও চুপ করেই রইলেন। তিনি ব্যবসায়ী মানুষ। তালাকপ্রাপ্ত মেয়েকে নিয়ে বিপাকে পড়বেন এ কথা ভালোই জানেন। তাছাড়া পরের পাত্র কেমন হবে, সেটাও চিন্তার বিষয়। মুহিবের রাগ বেশি হলেও খারাপ দিক বলতে এই একটাই। স্বভাব-চরিত্র বাকি সব দিক থেকে আর কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু শত বুঝিয়েও লাভ হলো না। একরোখা রুহিকে বোঝানোর সাধ্য কারও নেই। ওদিকে মুহিবও কয়েকবার চেষ্টা করার পর হাল ছেড়ে দিলো। মুহিবের পরিবার থেকেও মীমাংসা করার ব্যাপারে তেমন আগ্রহ দেখা গেল না। আজমল সাহেবের ছেলের জন্য মেয়ের অভাব হবে না, এ কথা উনারা বেশ ভালোভাবেই জানতেন। পাত্রপক্ষের অনাগ্রহ আর রুহির জিদের কাছে ছয় বছরের সম্পর্কটা হার মানলো। ছয় মাস ঝুলে থাকার পর ভেঙে গেল রুহির স্বপ্নের সংসার। 

এক নিমিষেই ডিলিট হয়ে গেল শত শত ছবি, ভিডিওগ্রাফি, আর আবেগঘন ক্যাপশন। পারফেক্ট কাপল পিকচারের জন্য ধার করা লাখো টাকা অবশ্য এত সহজে পিছু ছাড়ল না, সিকান্দার সাহেবের গলায় সাপের মতো পেঁচিয়ে থাকল। রুহির পরিবার এত বেশি আর্থিক টানাপোড়েনে পড়ে গেল যে, ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেয়ের মাস্টার্সে ভর্তির ফি যোগাড় করা গেল না। রুহি অনেক দৌড়াদৌড়ির পর বেসরকারি একটা প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেল। তবে সেখানে বেতন সামান্যই। হাতখরচ আর যাতায়াত খরচ মেটানোর পর ঋণশোধের জন্য কিছু বাঁচানো সম্ভব না। চিন্তায় চিন্তায় আমিনা বেগমের স্বাস্থ্য আরও নাজুক হতে লাগল। মেডিসিন আর ডাক্তারের খরচ চালাতেও এখন টানাটানি অবস্থা। সুন্দর স্বচ্ছল একটা পরিবার মাত্র অল্প কিছুদিনের ব্যবধানে প্রায় ধ্বসে গেল। 

সিকান্দার সাহেব মাঝে মাঝেই আগের কথা ভেবে আক্ষেপ করেন। মেয়েটাকে যদি একটু লাগামে রাখতেন, তাহলে হয়তো এই দিন দেখতে হতো না। কিন্তু শুধু কি রুহি দায়ী? তাদেরও কি দায় নেই? জমকালো অনুষ্ঠানের স্বপ্ন কি তারাও দেখেননি? ঋণ করে হলেও মেয়ের অন্যায্য আবদারগুলো মেনে নিয়েছেন। মেয়ের শখ পূরণ করতে গিয়ে কখন যে ছেলের ওপর জুলুম হয়ে গেছে ঠাহর করতে পারেননি। আয়ানের ভার্সিটির বেতনের টাকাটা পর্যন্ত দিতে পারেননি তিনি। শুধু ভেবেছেন কীভাবে মেয়ের বিয়ের দিনটা জাঁমজমকে ভরপুর হবে। সেসব লোকদেখানো আড়ম্বর আজ তাকে আর তার পরিবারকে কোথায় এনে ফেলেছে। এত আয়োজন, এত সমারোহকে এখন অভিশাপের মতো লাগে উনার। একেকজন ঋণদাতার চেহারা মনে আসতেই বুকে চিনচিনে ব্যথা শুরু হয়। 

ভার্সিটির শেষ বর্ষে উঠে আয়ান বিয়ে করে। রুহি অবাক হয়ে দেখে, এত সাদামাটা ভাবেও বিয়ে করা যায়! আমিনা বেগমও আগের মতো সামাজিকতার কথা বলেন না। উনি এখন নিজেই শয্যাশায়ী। সারাজীবন পাশে থাকা আত্মবিশ্বাসী মানুষটার মুখ থুবড়ে পড়ার দৃশ্য উনি মেনে নিতে পারেননি। 

সিকান্দার সাহেবও ছেলেকে বাধা দেননি। ছেলে ছাত্রাবস্থা থেকেই নিজের মতো চলছে। সেমিস্টার ফি, যাতায়াত খরচ, পরীক্ষার ফি পরিশোধ করেও কীভাবে কীভাবে যেন কিছু টাকা জমিয়ে ফেলেছে। সেই টাকাই মোহরানা দিয়ে বিয়ে করে নেয় ছেলেটা। আর বউ হয়ে যে মেয়েটা এলো, সে নিজের বাড়িতেও কিছু দেওয়ার জন্য জোরজবরদস্তি করেনি, এই পক্ষ থেকেও কিছু দেওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল না। তবে সিকান্দার সাহেবের একান্ত ইচ্ছে, এই লক্ষী মেয়েটাকে একদিন সোনার হার গড়ে দেবেন। ছেলের বিয়েতে লাখো টাকার অনুষ্ঠান করা লাগেনি। বাবা হয়ে একটা পয়সাও খরচ হয়নি। খুব হালকাভাবে বিয়েটা সম্পন্ন হয়েছে। বিয়ে তো এমনই সহজ হওয়ার কথা, তাই না?

আয়ানকে তারা একসময় কী তুচ্ছতাচ্ছিল্যই না করেছে! হাজার চিন্তার ভিড়েও আয়ানের ছিমছাম সাদামাটা সংসারটা দেখে অজান্তেই সিকান্দার সাহেবের চোখে জল চলে আসে। এ অশ্রু আনন্দের না অনুশোচনার ঠিক বোঝা যায় না..।

[ষোলো জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সংখ্যায় প্রকাশিত]