আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে বর্ণনা করেন,

‘নিঃসন্দেহে হাশরের ময়দানে প্রথম যার বিচার করা হবে সে হলো একজন শহীদ। তাকে বিচারের জন্য নিয়ে আসার পরে আল্লাহ তাকে মনে করিয়ে দেবেন যে, তাকে কী পরিমাণ নিয়ামত দুনিয়াতে দেওয়া হয়েছে। সে এগুলো সবই স্বীকার করবে। তারপর আল্লাহ প্রশ্ন করবেন, “তুমি এগুলো দিয়ে কী করেছ?” সে জবাব দেবে, “আমি আপনার রাস্তায় জিহাদ করেছি এবং শহীদ হয়েছি।” আল্লাহ বলবেন, “তুমি মিথ্যা বলছো। তুমি জিহাদ করেছ যেন মানুষ তোমাকে সাহসী বলে এবং তারা তা বলছে।” তারপর আল্লাহ নির্দেশ দিবেন তার মুখমণ্ডল মাটিতে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার জন্য।’[1]

এ হাদীসে আরও দুইজন ব্যক্তির কথা বর্ণনা করা হয়েছে, একজন হলো ধনী ব্যক্তি, যে অনেক দান করত, আরেকজন হলো কুরআনের শিক্ষক যে মানুষকে কুরআন শিক্ষা দিত। তবে দু’জনেই ভালো কাজ করত খারাপ নিয়তে। মানুষের কাছ থেকে প্রশংসা পাবার আশায়। হাদীসের কথা অনুসারে এ ধরনের বিষাক্ত ও ভেজাল নিয়তের কারণে তাদের তিনজনেরই বিচার করা হবে এবং পুরস্কারের বদলে তারা ভোগ করবে জাহান্নামের শাস্তি।

.

শুধু সালাত-সিয়াম, দান-সাদকার মতো আমাদের অতি পরিচিত ইবাদত এবং সমাজসেবামূলক কাজেই নয়, বরং সব কাজেই সহীহ নিয়ত করতে হবে। হাদীসে এটিকে উৎসাহিত করা হয়েছে। মুয়াজ ইবনু জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছিলেন, ‘আমি তাহাজ্জুদের সালাতের জন্য ঘুম থেকে উঠার কারণে আল্লাহর কাছে যেমন সাওয়াব আশা করি, ঠিক সেভাবেই ঘুমানোর জন্যও আল্লাহর কাছে সাওয়াব আশা করি।’[2]

.

ইবনু হাজার রহিমাহুল্লাহ মন্তব্য করেন, ‘তিনি বিশ্রামের জন্য সেভাবেই পুরস্কার আশা করেন, যেভাবে কঠোর পরিশ্রমের জন্য করে থাকেন। কারণ, কেউ যদি ভালোভাবে ইবাদত করার নিয়তে বিশ্রাম করে তাহলে সে বিশ্রামের জন্যও সাওয়াব পাবে।’[3][4]

.

এভাবে নিয়ত করলে মুসলিদের কোনো কাজ কখনোই নষ্ট হয় না। তুমি অনেক পরিশ্রম করে কিছু লিখলে, ভিডিও বানালে বা অ্যাকটিভিজম করলে, কিন্তু তা তেমন কোনো মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। বা তুমি অনেক কষ্ট করে কোনো ক্যাম্পেইনের আয়োজন করলে, কিন্তু কোনো কারণে তা করতে পারলে না। তুমি কোনো আর্টিকেল লিখলে, কিন্তু কোনো কারণে তা প্রকাশিত হলো না—এগুলোতে কোনো সমস্যা নেই। আল্লাহ তো দেখছেনই তোমার প্রতিটি কাজ। তোমার প্রতিটি কাজের প্রত্যেকটা সেকেন্ডের বিনিময় তিনি বহুগুণে বাড়িয়ে দেবেন।

.

ইসলামে পণ্ডশ্রম বলে কিছু নেই। সেকুলারিজমে আছে। 

এই যে দেখো, জুলাই আন্দোলনে হাজার হাজার মানুষ রক্ত দিল, প্রায় ত্রিশ হাজারের মতো মানুষ আহত হলো, কারও হাত কাটা গেছে, পা কাটা গেছে, চোখে দেখে না। কিন্তু এখন তাদের সাথে গাদ্দারি করে আবার সেই জুলুমের শাসনকেই ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। তারা কোনো স্বীকৃতি পাচ্ছেন না। যথাযথ চিকিৎসার অভাবে অনেকেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। অনেকের ঘরে খাবার নেই, সংসার কীভাবে চলবে তারা কেউ জানেন না।

বাংলাদেশের আপামর ছাত্রজনতা জালিমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর  ইসলামী চেতনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে খুনি হাসিনাকে নামানোর জন্য আন্দোলনে গিয়েছিল। আন্দোলনে শহীদ হয়ে তারা আল্লাহর কাছে  যাবেন এই তামান্না ছিল তাদের বুকে, যা আন্দোলন চলাকালীন বিভিন্ন ভিডিও, ছবি, ফেসবুক পোস্ট থেকে বারবার প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু এই যে এখন তাদের অবহেলা করা হচ্ছে, সেই জালিমের শাসনকেই আবার ফেরত আনার পায়তারা করা হচ্ছে, খুনিদের বিচার করা হচ্ছে না, শহীদদের রক্তের সাথে গাদ্দারি করা হচ্ছে—সেকুলার দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করে দেখো। শহীদের জীবন দেওয়া, আহতদের জুলুম-নির্যাতন সহ্য করা, হাত-পা-চোখ হারানো সব ব্যর্থ। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে তারা ব্যর্থ নন। তাদের এই আত্মত্যাগ বৃথা নয়। আল্লাহ তাদের প্রত্যেকটি কুরবানির পুরস্কার দেবেন। সেকুলারিজম মানুষের অবদানকে মূল্যায়ন করতে পারে না, সেক্যুলারিজম মানুষকে ব্যর্থ করে দেয়, হতাশ করে দেয়। কিন্তু ইসলাম মানুষকে ব্যর্থতা-হতাশা থেকে টেনে বের করে নিয়ে আসে চিরসফলতার, চির বিজয়ের পথে। 

.

ভাইয়া, আপু! খুব হুশিয়ার …, তুমি কীসের জন্য জীবন দিচ্ছ! কার জন্য জীবন দিচ্ছ! কোন চেতনা থেকে জীবন দিচ্ছ!