[ষোলোর পক্ষ থেকে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ষোলো ম্যাগাজিনের রংপুর জেলার তিনজন প্রতিনিধি সালাউদ্দিন সাকিব, উবায়দুল্লাহ ফাহিম ও সাইফুল্লাহ অয়ন। সাক্ষাৎকারটির শ্রুতিলিখন করেছেন আকিফ আল জাহিন।]
ষোলো : আসসালামু আলাইকুম। আজকে আমরা আছি শহীদ আবু সাঈদের বাসায়। আমরা গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা বলব তাঁর বাবা-মা’র সঙ্গে। তাঁর চাচাতো ভাই এখানে উপস্থিত আছেন - একই ডিপার্টমেন্টে পড়তেন, তাঁর ব্যাচমেট ছিলেন, ছিলেন তাঁর সহযোদ্ধা। আমরা তাঁর বাবার সাথে কথা বলব। আসসালামু আলাইকুম, আঙ্কেল।
আবু সাঈদের বাবা: ওয়ালাইকুম আসসালাম।
ষোলো: আঙ্কেল, আপনার নামটা বলবেন একটু?
বাবা: মকবুল হোসেন।
ষোলো: আপনি কী করেন এখন?
বাবা: এখন কিছু করি না, কৃষিকাজ করি।
ষোলো: আপনার ছেলে-মেয়ে কতজন?
বাবা: ছয় ছেলে, তিন মেয়ে।
ষোলো: আবু সাঈদ কত নম্বর ছেলে?
বাবা: ছয় নম্বর।
ষোলো: আন্টি, আপনার নামটা একটু জানতে চাচ্ছিলাম।
আবু সাঈদের মা: মোছা: নোহারা খাতুন।
ষোলো: আপনার ছেলে আন্দোলনে গিয়েছিল এটা কি শুরু থেকেই জানতেন?
বাবা: না।
ষোলো: আবু সাঈদ আন্দোলনে গিয়েছিল জেনে তাঁকে উৎসাহ দিয়েছিলেন নাকি নিরুৎসাহিত করেছিলেন? কেননা শুরুর দিকে অধিকাংশ বাবা-মাই ছেলে-মেয়েদের আন্দোলনে যেতে নিরুৎসাহিত করেছিল।
বাবা: আমি জানিই না যে, ও আন্দোলনে যোগ দিবে।
ষোলো: তখন কীভাবে জানলেন যে আপনার ছেলে শহীদ হয়েছে?
বাবা: এটা জানা গেল বেলা তিনটার দিকে।
ষোলো: কার মাধ্যমে জানলেন?
বাবা: জানলাম ওই যে শাহরিয়ার ঢাকায়… ওখানে রংপুর থেকে ঢাকায় ফোন করছে। ঢাকা থেকে ফির শাহরিয়ার তার মায়ের কাছে ফোন করছে।
ষোলো: ভাই, আমি এখন আপনার কাছে আসতেছি, ব্যক্তি জীবনে আবু সাঈদ কেমন ছিল?
আবু সাঈদের চাচাতো ভাই: ব্যক্তি হিসেবে আবু সাঈদ ছিল অনেক নম্র, ভদ্র, সৎ এবং নিষ্ঠাবান ছেলে। এবং অনেক মেধাবী ছাত্র ছিল সে।
ষোলো: বাংলাদেশ নিয়ে আবু সাঈদ ভাইয়ের চিন্তাভাবনা কীরকম ছিল?
চাচাতো ভাই: আবু সাঈদের চিন্তাভাবনা বলতে গেলে, আসলে সে অনেক মেধাবী ছাত্র ছিল। অনেক গরিব ফ্যামিলি থেকে সে উঠে আসতেছিল, এজন্য তাঁর চাওয়া ছিল যে, শুধু বড়লোকের বা ধনীর বা বিত্তবান মানুষেরাই শুধু পড়ালেখা করে ভালো কিছু করবে- এমনটা না হয়ে যদি কৃষক এবং ভূমিহীন মানুষের সন্তানও যেন পড়াশোনা করে ভালো হতে পারে এবং প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। এই লক্ষ্যে সে এমন একটি বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছিল, যে বাংলাদেশে কোনো বৈষম্য থাকবে না, কোনো কোটা থাকবে না, মেধার ভিত্তিতে যেন প্রত্যেকেই জব পায় এবং ভালো স্থানে যেতে পারে। সুতরাং সে চাইছিল যে একটা বৈষম্যহীন বাংলাদেশ দেখতে।
ষোলো: ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে আপনি কেমন ভাবে দেখতে চান?
বাবা: ভবিষ্যতে কোনো স্বৈরাচার যেন জন্ম না নেয়, সকলেই যেন খোলামেলা শান্তিতে বসবাস করতে পারে; আমার ছেলের যে চাওয়া ছিল, সেই অধিকার যেন সবাই প্রতিষ্ঠিত করে।
ষোলো: এখন তাঁকে নিয়ে বিভিন্ন মহল রাজনীতি করতেছে, এটাকে আপনি কীভাবে দেখতেছেন?
বাবা: আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করত না।
ষোলো: মানে এখন রাজনীতি করতেছে, রাজনৈতিক যে নেতারা আসতেছে তাঁকে নিয়ে…
বাবা: আমার ছেলে কোনো দলের সঙ্গে রাজনৈতিক হিসেবে মিশেনি। উনি নিরপেক্ষ ছিল।
চাচাতো ভাই: এখন আবু সাঈদ মারা যাওয়ার পর আমি চাই যে আবু সাঈদ সকল দলের হোক, সকল রাজনৈতিক দলের হোক, সকলের জন্যই আবু সাঈদ।
বাবা: সকলের জন্যেই। সকলের সাথেই মিলেমিশে থাকবে।
ষোলো: আবু সাঈদের যে চেতনাগুলো ছিল সেগুলো কি বাস্তবায়ন হচ্ছে? আপনি কি মনে করছেন?
বাবা: এখনো তো হলো না। কোটা তো আছেই। তারপরে, মেধাবী ছাত্র হলেও তাও পয়সা না দিলে চাকরি হয় না।
চাচাতো ভাই: এটা যেন দূর হয়।
বাবা: এটা যেন দূর হয়। মেধার ভিত্তিতে, নিজ যোগ্যতায় টিকে যেন তারা চাকরির অধিকার ফিরে পায়।
ষোলো: এপ্রিল ১৩, ২০২৪। একটা ফেইসবুক পোস্টে আবু সাঈদ LGBT বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু আজকে আমরা দেখেছি এই মতবাদটা প্রতিষ্ঠা করার জন্য উপর মহলের কিছু লোক উঠেপড়ে লেগেছে। তো আপনার কাছে কি মনে হয় না, এটা আবু সাঈদের আদর্শের পরিপন্থী?
চাচাতো ভাই: বুঝতে পারছি প্রশ্নটা। আবু সাঈদ তাঁর মতটা, চব্বিশে যখন সে বেঁচে ছিল, তখন পোস্টটা করেছিল। LGBT মতবাদ তাঁর আদর্শের পরিপন্থী, সে কখনোই চায়নি এরকম কিছু বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হোক। এমন একটা অপকর্ম বা অপচর্চা প্রতিষ্ঠিত হোক বাংলার জমিনে এটা আবু সাঈদ কখনোই চায়নি। এটার ঘোর বিরোধী ছিল সে।
[ঈষৎ পরিমার্জিত]