[ষোলোর পক্ষ থেকে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন নাঈমুর রহমান ও আসাদুল্লাহ আল গালিব। সাক্ষাৎকারটির শ্রুতিলিখন করেছে ফাইজান বিন হক।]

ষোলো:  আপনার নামটা যদি বলতেন একটু!

শহীদের পিতা: মোহাম্মদ মহিউদ্দিন।

ষোলো: আসহাবুল ইয়ামিন যে আন্দোলনে গিয়েছে, সেটি কি আপনি আগে থেকে জানতেন?

শহীদের পিতা: আগে থেকে জানা বলতে–সে তো রাজনীতি সচেতন, কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী ছিল না, বা ব্যক্তিগতভাবে, পারিবারিকভাবেও আমরা রাজনীতি করি না। যার প্রেক্ষিতে সে প্রথমে মেডিকেলে চান্স পায়, সেখানে তার এক কাজিন (ডাক্তার) বলল যে, ‘ওখানে রাজনীতি আছে, তোমাকে তাহলে ওখানে যেতে হবে না।’ এরপরে সে চান্স পেল MIST-তে। ওখানে আমরা জানি যে কিছুটা খরচ বেশি, সাধারণত মেডিকেল, সরকারি (ভার্সিটির) চেয়ে। ওর টার্গেট ছিল বুয়েটে ভর্তি হওয়া, সেভাবেই ইঞ্জিনিয়ারিং কোচিং করেছে। তখন বলল যে, ‘আমার যদি পছন্দের সাবজেক্ট হয়, তাহলে তুমি একটু কনসিডার কইরো।’ আমি বললাম, ‘দেখা যাক’। পরে ঠিকই MIST-তে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং-এ সে চান্স পেল। তখন বলল যে, ‘আমি এই সাবজেক্টে পড়তে চাই। তুমি ভর্তির ব্যবস্থা করে দাও। তারপরে বুয়েটে যদি হয়, তাহলে বুয়েটে যাব।’ আর ওখানে মনে হয় এক সেমিস্টারের পরেই বুয়েটে পরীক্ষা হবে, কিন্তু সে ভালোভাবে পরীক্ষা দেয়নি। ওর আম্মু বকাঝকা করল। মাঝখানে আমি ২০১৭ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলাম। তখন বলল যে, ‘এখন তো তোমার আব্বু ব্যবসা করে, স্বাভাবিকভাবেই পয়সা-কড়ির একটু সমস্যা আছে, তুমি বুয়েটে ভর্তি হলে তো খরচ লাগবে না। তুমি বুয়েটে পরীক্ষা দাও’। সে অনেকটা অনিচ্ছা স্বত্বেও পরীক্ষাটা দিল, কারণ ওখানকার (MIST) ক্যাম্পাস ভালো লেগেছিল, তার প্রিয় সাবজেক্ট এবং যেহেতু অরাজনৈতিক থাকতে চায়, কোনো গ্যাঞ্জাম নেই, এটাই।’ 

পরে বুয়েটে পরীক্ষা দিয়ে সে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্টে চান্স পায়। তখন বলে যে, ‘আমি তো বুয়েটে সিএসই-তে চান্স পাইনি’ – এবং এটা আসলে অনেকটা ইচ্ছাকৃত টাইপের আরকি। কারণ সে পরীক্ষা ভালো দেয়নি। বলেছে, ‘আর, বুয়েটে আবরার ভাইয়ের ঘটনা তোমরা জানো না?’ – কারণ, আবরার হচ্ছে আমাদের পাশের গ্রামের, একই ইউনিয়ন। ‘সুতরাং আমি এখানেই পড়ব!’ আমিও বললাম, ‘ঠিক আছে, খুব ভালো। ঠিক আছে, তুমি পড়াশোনা করো!’

ষোলো: যখন সে আন্দোলনে যেতে চেয়েছে, হয়তো আপনাকে জানিয়েছে, সে ক্ষেত্রে আপনি উৎসাহ দিয়েছিলেন কি?

শহীদের পিতা: সেক্ষেত্রে যেটা বলছিলাম, সে ওখানে পড়ছিল। তারপরে যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু হয়, তখন তারা বন্ধুদের যে গ্রুপ ছিল, তাদের সবাই এই আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে। এবং তারা ভেতরে ভেতরে কিছু কাজ করে, মানে মোবাইলের মাধ্যমে, অনলাইনে। বিভিন্ন নির্দেশনামূলক পোস্ট দিচ্ছে, ফেসবুকে গেলে বোঝা যায়; ওখানে যেহেতু সরাসরি রাজনীতি করার সুযোগ নেই, এবং সে রাজনীতি করেও না। কিন্তু তারা বলছিল আমরা এই আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করছি। এরপরে ওরা এক সময় টিচারদেরকে বলছে যে, আমরা এই আন্দোলনে যেহেতু রাস্তায় যাব না, আমরা তাহলে ক্যাম্পাসের মধ্যে একদিন অবস্থান ধর্মঘট করব, আমার যে আন্দোলনের সাথে আছি এটা জানান দেওয়ার জন্য। তারপর যথারীতি ক্লাস করব।

এটা যেহেতু স্বাভাবিকভাবে আর্মি দ্বারা পরিচালিত, ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে—তারা এলাও করে না। পরে যখন ১৬ তারিখ দিবাগত রাতে ওদেরকে হল থেকে পরদিন সকালে বের হওয়ার নির্দেশ দেয়, তখন ওরা বন্ধুরা সবাই বলছিল, ‘না, কাল সকালে আমরা যদি বের হয়ে যাই তাহলে দূরের যারা বন্ধু, তাদের অনেকের কাছে টাকা পয়সাও নেই, হঠাৎ করে যেহেতু সিদ্ধান্তটা, টিকিট ম্যানেজ করতে তো সময় লাগবে।’ ততক্ষণে অবরোধ শুরু হয়ে গিয়েছে, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ঢাকা শহরে চলাচলে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।

তখন ও আমাকে বলছে যে, ‘আমরা দুপুরে লাঞ্চ করে তারপর বের হয়ে যাব, যাতে ওদেরকে ইতিমধ্যে ব্যবস্থা করে দেওয়া যায়’। তখন ওদের হাউস টিউটর নাকি বলেছেন, ‘এটা গভর্নরকে বলতে হবে। তোমরা ছয়জন-ছয়জন করে তার কাছে যেতে পারবে, তাকে বলো’। কিন্তু সারারাত ধরে শুধু হলের ছয়জন-ছয়জন করে গিয়ে কথা বলেছে ঠিকই, কিন্তু রেজাল্ট একই। কালকে সকালে বের হয়ে যেতে হবে। তখন হলে ফেরত এসে ’বল বীর, বল উন্নত মম শির’ জোরে চিৎকার করে গাইছে। কারণ, দেখছে এখানে কিছু হবে না। পরের দিন সকালে সে বাসায় চলে গেল।

ষোলো:  ১৭ জুলাই?

শহীদের পিতা: ১৭ তারিখ সকালে‌। ওদের ওখানে সাহরির ব্যবস্থা করে না, ও রোজা থাকে নরমালি। যেহেতু ব্যবস্থা করে না, বাসায় গিয়ে ওর আম্মুকে ও বলছে যে, ‘এরকম আমার কিছু বন্ধুও তো বাড়ি যেতে পারছে না, তো নানুর বাসা—মানে আমাদের ব্যাংক টাউনের এক দেড় কিলোমিটার আগে—ফাঁকা আছে। ওরা এসে থাকবে কিনা আব্বুকে একটু জিজ্ঞেস করো।’

আমাকে বললো। আমি বললাম, ‘না, কোনো সমস্যা নেই। ওখানে যেহেতু গ্যাস আছে, ওরা রান্নাবান্না করে খাবে। পরে যখন খুলে দেবে তখন যেতে পারবে।’ ও সবসময়ই তার বন্ধুদের বিষয়ে এমনই ছিল। ওর ক্লাসে খুব একাগ্রতার সাথে ক্লাস ফলো করত। যদি কখনো বুঝতে না পারত তখন দাঁড়িয়ে যেত। তার মধ্যে একটা হতাশা কাজ করছিল যে, সেখানে (MIST) ভালো ভালো টিচার থাকতে পারছে না। আপনারা জেনেছেন যে, সেখানে ইন্ডিয়ান কিছু টিচার ঢুকেছে এবং আর্মি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। এর আগে ছিল যে বাইরের ইউনিভার্সিটি থেকে ভালো ভালো ছাত্র সেখানে টিচার হিসেবে থাকত। কিন্তু তাদেরকে ওরা এক ধরনের চাপের মধ্যে রাখছিল। তাদের স্বাধীনতা, তারা যেভাবে কাজ করতে চায়, অ্যাসাইনমেন্টের জন্য যে বাজেট চায়, এগুলো ওরা দিতে চায় না। তারা একসময় বুঝে গেছে যে, আমাদেরকে আসলে ওরা সরাসরি ‘না’ বলছে না, মানে ইনডাইরেক্ট বুঝাতে চাচ্ছে যে, বাইরের কেউ এখানে থাকা যাবে না। আর, ওরা আর্মি দিয়েই পরিচালিত হবে। বাইরের আর কেউ থাকতে পারবে না। এক টিচারকে নাকি (ইয়ামিন) জিজ্ঞেস করেছে, ‘স্যার, আপনারা চলে যাচ্ছেন, ঘটনা কী? শুধু কি বেতনের জন্যেই যাচ্ছেন?’ তখন ওনারা বলছে, ‘না, শুধু বেতনের জন্যে নয়, এখানে এই ধরনের একটা পরিবেশ তৈরি হয়ে যাচ্ছে’। এটাও কিছুটা অস্বস্তিতে ফেলে যে এখানে আসলে কী হতে যাচ্ছে এবং যে (বাকি) টিচারগুলো আছে, তাদের পড়ানোর স্টাইল খুব একটা ওর পছন্দ হয় না, ভালো না!

তারমানে সে এই সমস্ত ব্যাপারেও যথেষ্ট কনসার্ন থাকত। কিন্তু এইটা এত ঘন ঘন হচ্ছিল যে, বন্ধুরা ওকে চেপে ধরত যে, আজকে কী ক্লাস হলো আমরা তো কিছু বুঝলাম না। আর ও (একা) কতবার বলবে? সে এক ধরনের হতাশার মধ্যে আছে। তখন বন্ধুদের সে বলেছিল ক্লাস শেষে লাইব্রেরিতে তোদেরকে আমি ক্লাস নেবো। এটাই হচ্ছিল। প্রায়ই এমন হচ্ছিল যে, ও যখন লাইব্রেরিতে ক্লাস করাতো, অনেক রাত হয়ে যেত। যখন ফেরত আসতো ক্যান্টিনে, তখন দেখত খাবার শেষ হয়ে গেছে। এক ধরনের বৈষম্যটাকে সে এখন পরিষ্কারভাবে দেখতে পাচ্ছে। এটাকে কীভাবে মিনিমাইজ করা যায়? কিছুটা ভেতরে ভেতরে সে প্রতিবাদী হয়ে যাচ্ছিল। সে একা কীভাবে এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যাবে?

তারপরে ১৭ তারিখ আমার ঢাকায় কিছু কাজ ছিল। যেহেতু সারারাত ঘুমায়নি, একটা ফেসবুক স্ট্যাটাসে সে ওই দিনকার সারাদিনের ঘটনাটা লিখছিল। আমি ঢাকার কাজ সেরে রাতে যখন বাসায় ফিরি, ওর সাথে আর কোনো কথা হলো না। খাওয়া-দাওয়া করে ঘুমিয়ে গেলো সে। পরে তিনটার দিকে আমরা উঠলাম আবার, যেহেতু আমরা দুইটা রোজা থাকি। 

ষোলো: আশুরার রোজা?

শহীদের পিতা: হ্যাঁ, আশুরার দুইটা রোজা থাকি। ওইদিন রোজা থাকার জন্য উঠছি, তখন দেখি ওর রুমে—ড্রইং রুমে একটা ডিভাইন টাইপের আছে, ওখানেই ঘুমাতো, ভাড়া বাসায় ছিলাম, ছোট বাসা—তখন দেখি ওর ল্যাপটপ খোলা। আমি বলি, ‘কী ব্যাপার? তোমার ল্যাপটপ খোলা!’ ও বলে যে, ‘দিনে তো অনেক ঘুমাইছি আর কিছু লেখালেখি ছিল। আর বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করছি। আর মনে করেছি সেহরি খেয়ে নামাজ পড়ে ঘুমাব’। ওর অস্থিরতা যেহেতু বুঝতে পারতেছি, বলি, ‘না, তুমি যেহেতু গতকালকে রোজা থাকতে পারো নাই, আজকে রোজা থাকা দরকার নাই’। ও বলে, ‘আচ্ছা ঠিক আছে!’

পরে নামাজ পড়ে এসে ও আবার ঘুমাইতে গেল। আমিও গেলাম। এরপর সাড়ে দশটার দিকে আমার ব্যাংকে কিছু কাজ আছে। ঢাকায় যেহেতু যাওয়া যাবে না। তাহলে সাভারের ব্যাংকগুলোতে আমি কিছু কাজ সেরে আসি। আমি যখন বের হচ্ছি তখন সে গ্যারেজ পর্যন্ত দৌড়ে এসে বলল, ‘আব্বু, মিরপুরে তোমার কোনো পরিচিত হসপিটাল আছে?’ আমি বললাম, ‘না। মিরপুরে তো পরিচিত নেই। কেন কী হইছে?’ বলে, ‘আমার বন্ধুরা আহত হয়েছে, কিন্তু হসপিটালে তাদেরকে ভর্তি নিচ্ছে না’। আমি তখন বললাম যে, ‘বিআইএইচএস টেকনিক্যালে আছে, ওটা তো স্বায়ত্বশাসিত। হয়তোবা ওখানে এরকম আচরণ নাও করতে পারে। ওখানে যাও!’ তখন ও একটু রাগের সাথে বলে, ‘আমি তোমাকে মিরপুরের কথা বলি, তুমি আমাকে টেকনিক্যাল দেখাও। যাও, তুমি তোমার কাজে যাও। আমি দেখছি কী করতে হবে!’ এই বলে হনহন করে বাসায় ঢুকে গেল। 

এই হচ্ছে তার সাথে আমার লাস্ট কথা। আমি সাভারে ব্যাংকে গেলাম। কাজ করে যখন বারোটার দিকে বের হচ্ছি মেইন রোডে, তখন অটোওয়ালা বলছে, ‘গাড়ি নিয়ে মেইন রোডে যাওয়া যাবে না। কারণ ওখানে গন্ডগোল হচ্ছে। আপনারা ফিরে গিয়ে বাজারের পেছন দিক দিয়ে বের হতে পারেন’। তখন আমার ড্রাইভার গাড়ি ঘোরায়। এনাম মেডিকেলের আরও পেছন দিক দিয়ে আমরা ব্যাংকে আসলাম।

ঐদিকে সাভার বাসস্ট্যান্ডে দেখছি যে সব গাড়ি বন্ধ হয়ে গেছে, চলাচল করছে না। তারপর যখন বাসায় ঢুকি, তখন সাড়ে বারোটা বাজে। দেখি ও ডিভানের উপর ওইভাবেই শুয়ে আছে। মোবাইল দেখতেছে, ইউজুয়াল। আমি ঢুকতে ঢুকতে বলছি যে, গণ্ডগোল তো শুধু ঢাকায় হচ্ছে না, সাভারেও শুরু হয়ে গেছে। এরপরে ও কোনো কথা বলছে না, ও শুনল। আমি বললাম, ‘অলরেডি গণ্ডগোল শুরু হয়ে গেছে সারাদেশের মতো। আমি গাড়ি নিয়ে আসতে পারছি না। ভেতর দিয়ে আসলাম।’ ও শুনে যাচ্ছে, কিছু বলল না। পরে আমি আমার রুমে চলে গেলাম। ওর মা আবার বলল যে, নামাজের সময় হয়ে যাচ্ছে। গোসল করে নাও!

পরে গোসল করল। তারপর আমরা—আমাদের বাসায় যেহেতু টেলিভিশন নাই—মোবাইলেই মোটামুটি ফেসবুকে (জানার) চেষ্টা করতেছি কোথায় কী অবস্থা। করতে করতে দেরি হয়ে গেল। আমি তাই নামাজের জন্য বের হয়ে গেলাম। ওর একটা অভ্যাস ছিল যে গোসলের ওযুতে সে নামাজ পড়ত না। বলে গোসলের ওযু। গোসলের আগে যেহেতু ওযু করা হয়, গোসল করলে এটাই ওযু হিসেবে ট্রিট হয়। কিন্তু ও বলে যে, ‘না, গোসল আর নামাজের ওযু মিলাইয়ো না।’ আমি বলি, ‘আচ্ছা, ঠিক আছে’। দেখি যে, যেটা কমন বাথরুম সেখানে ও ওযু করতেছে। আমি মনে করছি, যেহেতু ওযু করতেছে নামাজ পড়বে, আর নরমালি নামাজ কাযাও করে না। তাই, আমি আর একসাথে বের হলাম না। আমি কিছুক্ষণ আগেই বের হয়ে চলে গেলাম। মসজিদে গিয়ে দেখি যে জামাত শুরু হচ্ছে।

ষোলো: যুহরের?

শহীদের পিতা: হ্যাঁ, যুহরের। দেড়টায় জামাত আমাদের। আমি সালাম ফিরিয়ে পিছনে তাকালাম। দেখি যে, দুই কাতার পিছনে ও আবার উঠে দাঁড়াচ্ছে, যেহেতু এক রাকাত বা দুই রাকাত পায়নি। এই অবস্থায় তাকে শেষ দেখা। 

ষোলো: এটা ১৮ তারিখ?

শহীদের পিতা: হ্যাঁ, এটা ১৮ তারিখ। রোজা থাকতে চাইলে আমরা বলি না তোমার থাকা দরকার নাই। ও বলে, ‘আচ্ছা ঠিক আছে থাকব না’। রোজা থাকার বিষয়টা কিছুটা ভুলভাবে (মিডিয়ায়) আসছিল। পরে আমি অবশ্য পরিষ্কার করছি যে, না, সে রোজা থাকতে চেয়েছিল। আমরা তাকে থাকতে দিইনি। 

সকাল থেকে মনে হচ্ছিল ওর মধ্যে একটা অস্থিরতা কাজ করছে। যেহেতু বন্ধুদের জন্য সে কিছু করতে পারছে না, তারা কে কোথায় আছে, বাড়ি যেতে পারছে না, আবার বলছে নানুর বাসায় আসবে। আবার হঠাৎ করে তারা মিছিলে যে আহত হইছে সেখানেও আমি কিছু করি নাই—সব মিলিয়ে ওর মধ্যে একটা অস্থিরতা কাজ করছে এটা আমি বুঝতে পারতেছি। যেহেতু নামাজে আসছে, আমি মনে মনে ভাবছি আল্লাহ তার অন্তরে শান্তি দিক, এরকম একটা ফিলিংস নিয়ে ও নামাজে আসছে।

যেহেতু প্রচুর রৌদ ছিল, বাসায় দুপুরের লাঞ্চের কোনো ব্যবস্থা নাই। যেহেতু সবাই রোজা আছি, ও ছাড়া। মনে করছি যে এখানে এসির মধ্যে কিছুক্ষণ থাকা হলে বা (এসি) বন্ধ করে দিলেও তো আধা ঘন্টার ঠান্ডা। সেদিন আমি যুহরের সুন্নত নামাজ, নফল নামাজ, তসবি, তাহলিল আস্তে আস্তে অন্যান্য দিনের তুলনায় একটু আয়েশের সাথেই পড়তেছি। একটু সময় লাগে লাগুক অসুবিধা নেই। ঠান্ডার মধ্যে আছি।

পরে যখন বের হচ্ছি তখন জাস্ট দুইটা বাজে। মসজিদ থেকে আমি বেরিয়ে আসতেই দেখি যে, ওর আম্মার দুইটা মিসডকল। ফোন যেহেতু সাইলেন্ট ছিল, মোড ঠিক করতে গিয়ে দেখলাম। আমি মসজিদের ভিতর থেকেই ফোন দিলাম যে, আমরা নামাজে আসছি, ফোন দিছো কেন? বলছে যে, ‘না, তোমার ছেলে নামাজে যাওয়ার সময় বলে গেছে সে নাকি তার বন্ধুদের দেখতে যাবে। তো আমি নিষেধ করছি সে আমার কথা শোনে নাই। এখন দেখো কোথায় গেল’। আমি বললাম, ‘আমি দেখতেছি’। আমি ফোন দিলাম। দুইবার রিং হলো, কিন্তু ধরল না। তখন আমি ওর মাকে আবার ফোন দিলাম, ‘আমার ফোন তো রিং হচ্ছে, ধরছে না। তোমার ছেলেকে তুমি আটকাতে পারো নাই। এখন রাস্তাঘাটে গাড়িঘোড়া চলছে না। বন্ধুরা বলতে তো ইউনিভার্সিটির বন্ধুরা মিরপুরে আর স্কুল-কলেজের বন্ধুরা সাভারে। তা আমি আন্দাজে কোথায় যাব?’ পরে বললাম, ‘মসজিদ থেকে বের হয়ে বাসার দিকে আসতেছি’। তখন ওর আম্মা আবার ফোন ব্যাক করে বলছে যে, ‘আমার ফোন বাজছে, কিন্তু ধরছে না’। তারপর আমি ভাবছি যে, ওর মার ফোন ধরার কথা, আমারটা ধরছে না হয়তো সকালে একটু রাগ করছে—এরকম কিছু হতে পারে। আমি বলি যে, ‘আচ্ছা, ঠিক আছে। হয়তো ওর পকেটে আছে, হয়তো মিছিলে আছে, গ্যাঞ্জামে শুনতে পাচ্ছে না। তবে যখন মিসডকল দেখবে, ও তখন ব্যাক করবে’।

আমি বাসায় আসতেছি হাঁটতে হাঁটতে। ওর বোনকে বলছি যে, ‘তোমার ভাইয়া তোমার কথা শোনে। তুমি ওকে নিষেধ করতে পারো নাই’। আমার মেয়ে বলছে, ‘নিষেধ করার কী আছে? আমরা কি আন্দোলনে যেতে পারি না? করতে পারি না!’ আমি বলেছি, ‘হ্যাঁ, যেতে পারো, করতে পারো। কিন্তু তোমার ভাইয়া তো জীবনে কোনোদিন এই রাজনীতি করে নাই। সে তো রাস্তায় কোনোদিন মিছিলে যায় নাই। সে তো পুলিশের এটিটিউড জানে না’।

আমরা যেমন নাইনটিতে তখন আমরা ইউনিভার্সিটিতে। তখন যেমন যেদিন হরতাল-অবরোধ হতো, ক্লাস হবে না, একটা উৎসব উৎসব ভাব, পিকেটিং-এ যাচ্ছি! এটা একটা বিশাল আয়োজন টাইপের। পুলিশ খুব বেশি হলে কাঁদানে গ্যাস ছুড়ত, ছাত্ররা আবার ওদের দিকে ছুড়ে দিত। ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া, ইট-পাটকেল ছোড়াছুড়ি আবার যার যার মতো চলে আসত। ‘সেই সময়ের আন্দোলন আর এখনকার আন্দোলন, এখনকার পুলিশের বিহেভিয়ার এক না। এটা তোমার ভাইয়া জানে না, কোনোদিন দেখে নাই। এইজন্যে’। সে বলে, ‘তোমার চিন্তা করতে হবে না। ও চলে আসবে’। বলি, ‘হ্যাঁ দুআ করো, যেন চলে আসে’। ওর মা কিছুক্ষণ পরপর ফোন দিয়েই যাচ্ছে, যেহেতু রিং হচ্ছে। 

এইভাবেই আমি আবার মোবাইলে দেখার চেষ্টা করতেছি কোথায় কী হচ্ছে না হচ্ছে, কোনো পোস্ট আসলো কিনা। তা সাভার কেন্দ্রিক যেহেতু আমার ফেসবুক ফ্রেন্ডের সংখ্যা খুবই কম, হয়তো হাতেগোনা দু'চারজন। আমার সব ইউনিভার্সিটির বন্ধু, কলেজের বন্ধু বা কলিগ সব ঢাকার বাইরে। এজন্য সাভারের কোনো ঘটনা নিয়ে ফেসবুকেও আমি কোনো পোস্ট পাচ্ছি না। অস্থিরতার মধ্যে কাকে ফোন দিব? কী জানব? কিছুই তো না। ও গেছে, মিছিলে গেছে। এখন কী আর করার, দেখা যাক—এরকম চিন্তা করছি আর ফেসবুক দেখছি। কিন্তু ওর মা কিছুক্ষণ পরপর ঠিকই ফোন দিয়ে যাচ্ছে। এইভাবে তিনটার দিকে ওর মা আমাকে বলতেছে যে একটা ছেলে ইয়ামিনের ফোন ধরে বলছে এনাম মেডিকেলে যেতে। আমি বলি যে, ‘ঠিক আছে। আমি তাহলে ফোন দিয়ে দেখি যে কী অবস্থা, কেন এনাম মেডিকেলে?’ কিন্তু আমি যখন ফোন দিলাম তখন আবার সুইচড অফ পেলাম, এবং পরে ওই ফোনের আর কোনো সন্ধান পাইনি। তখন তার বোনকে বললাম, ‘তুমি বাসায় থাকো, আমি আর তোমার আম্মু যাচ্ছি’। আমরা দুজন গেলাম। আমি আর ওর মা ইমার্জেন্সিতে খুঁজতেছি ওকে। তখনই একজন নার্স বলতেছে, ‘আপনারা কাকে খোঁজেন?’ আমি বলছি, ‘আমার ছেলে নাকি এখানে ভর্তি হয়েছে? ইয়ামিন ওর নাম’। আমি জানি যে ওর ওয়ালেটে আইডি কার্ড থাকে। সে বলে, ‘তিন তলায় ওটিতে যান’। ওখান থেকে বের হয়ে তিন তলায় গেলাম, তিন তলা থেকে যখন নিচে নেমে আসি, তখনই দোতলা থেকে একজন মহিলা ডাক্তার এসে ওর মাকে বলতেছে, ‘আপনি কি ইয়ামিনের মা?’ তখন সে বলছে যে, ‘হ্যাঁ’। তখন সে মহিলা এসে জড়ায়ে ধরে বলতেছে, ‘আসেন, নিচে আসেন। ইয়ামিনকে নিচে রাখা হয়েছে!’

তখনো আমরা মনে করছি যে, হয়তো অপারেশন হইছে। নিচে কোথাও রাখছে। তখন তো অত্যাধিক খারাপ চিন্তা করার ব্যাপার না। আহত হইছে—আমরা এই চিন্তা করতেছি। তখন দেখি একটা রুমে তালা দেওয়া। ‘এই রুমে আছে, একটু অপেক্ষা করুন’। তখন সেখানে অনেক ছাত্রছাত্রীরা আছে যারা আমাদেরকে চেনে না। যখন ঐ রুমের সামনে আসি তখন তো তারা বুঝছে যে ওর বাবা-মা’ই হবে। তখন ওরা এসে মিছিল করতেছে, কিন্তু ওরাও সরাসরি কিছু বলছে না, বা আমার ঐ মুহূর্তে কোনো বোধ কাজ করছে না যে ইয়ামিন মারা গেছে, এখানে রাখছে। আমি শুধু ভাবছি অক্সিজেন দিচ্ছে, এজন্য একটু আলাদা ভাবে রাখছে—এই চিন্তাই আসতেছে। আর কেউ সরাসরি ঐভাবে বলছেও না যে ‘আপনার ছেলে মারা গেছে’। পরে ওই এক সিকিউরিটি গার্ডের কাছে চাবি ছিল। সে নিজে এসে যখন খুলে দিল তখন দেখি যে ও (ইয়ামিন) ডান দিকে কাত হয়ে শুয়ে আছে, হাত দুই পাশে। একজন ঘুমন্ত মানুষ যে রকম, ঠিক সে রকমই আছে। তখন আমি বিশ্বাস করতে পারছি না, আমি বলছি যে আমার ছেলের কী অবস্থা? ডাক্তার বলছেন, ‘আসলে আপনার ছেলেকে আমরা কোনো ট্রিটমেন্টের সুযোগই পাইনি’। শুনে আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। তখন ওর মা মাথা ধরে কান্নাকাটি, আর আমি ওর বাম হাতটা আমার হাতে তুলে নিয়ে দেখি যে এটা নরমাল। শক্ত হয় নাই বা ওরকম ঠান্ডাও না। 

ডাক্তার বলে যে, 'আমরা একটা ইসিজি রিপোর্ট নিয়েছিলাম। সেখানেও আমরা কোনো সেন্স পাই নাই। আসলে আমরা কোনো ট্রিটমেন্টের সুযোগই পাইনি’। যেহেতু আমার ঐ মুহূর্তে কোনো সেন্স কাজ করছে না। আমার ছেলে এই কিছুক্ষণ আগে আমার সাথে নামাজ পড়েছে, এখানে এসে বলছে যে নেই! মারা গেছে। মানে এটা আমাকে কোনো ইফেক্ট করছে না—এরকম একটা অবস্থা। আমি বলছি যে, ‘আপনারা পারেন নাই, এখানে রেখে লাভ কী? আমি ছেলেকে বাসায় নিয়ে যাব’। তখন ওরা ভয় পাচ্ছে পুলিশের, আর ছাত্ররা বাইরে মিছিল করবে। তখন আমরা সামনে চলে আসি, ওরাও ওই রুমের ভিতরে। এসে বলছি, 'আমার ছেলেকে বাসায় নিয়ে যাব, ছেলেকে ছেড়ে দিন’। ওরা একটু বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। পরে যেহেতু ওই ছাত্রছাত্রীরা আমাদের সাথে যোগ দিল, ওরা ছেড়ে দিল। তখন তো আমরা বুঝতে পারি নাই যে তার সাথে এই অমানবিক আচরণ করা হলো, নিষ্ঠুরতা দেখানো হলো—ওই মুহূর্তে চেহারা দেখে কিছু বোঝার উপায় ছিল না, বা আগের ঘটনাটাও আমরা কিছু অনুমান করতে পারিনি। তারপর আমি বাইরে নিয়ে আসি। তখন ওর এক বন্ধুকে পেলাম। আমি বললাম যে, ‘তুমি একটা অ্যাম্বুলেন্স ডাকো!’ তখন ও বলছে যে, ‘আঙ্কেল, আপনি এখানেই দাঁড়ান। যদি আপনি এখান থেকে সরে যান ওরা মিছিল করার জন্য নিয়ে যাবে’। আমি বলি, ‘না, আমি মিছিল করতে দেবো না। যেহেতু আমার ছেলে কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী ছিল না, সুতরাং রাজনীতির গুটি হতে দেবো না। আমি আছি, তুমি অ্যাম্বুলেন্স দেখো’।

তখন যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা ছিল, ওরা যাচ্ছে না, ওরা বলছে, ‘আঙ্কেল আমরা এটা মেনে নিতে পারি না!’ আমি বলি, ‘এটা হবে না, তোমরা যা খুশি করো, কিন্তু ওকে নিয়ে যেতে পারবে না’। অ্যাম্বুলেন্স আসার পর বলি যে, ‘তোমরা ধরো, কয়েকজন তুলে ধরো!’ তখন কিছু ছাত্র-ছাত্রীরা আমাদের সাথে আসলো। তখন আমি ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিলাম যে, ‘আমার ছেলে কিছুক্ষণ আগে সাভার মডেল মসজিদের সামনে শহীদ হয়েছে। তোমাদের সবার কাছে দোয়া চাই!’ যেহেতু এখন আর জনে জনে ফোন দিতে পারব না, পরিবেশ যেহেতু খারাপ। 

এরপরে, বাসায় নিয়ে আসি। তখন ওর আরেক বন্ধুর বাবা এসে বলেন যে, ‘ভাই এখন কী করবেন? আপনি যেভাবে বলেন আমরা সেইভাবে কাজটা করতে চাই’। ‘যেহেতু আমার বাবা-মা’র কবর আমার গ্রামের বাড়িতে, তাই আমি চাই ওকে গ্রামে নিয়ে যেতে’। তিনি বললেন যে, ‘আচ্ছা ঠিক আছে। কোথায়?’ আমি বলি যে, ‘কুমারখালী, কুষ্টিয়া’। তখন বললে যে, ‘ফ্রিজিং কার দিব?’ বলি, ‘হ্যাঁ’। কারণ যেতে যেতে রাত হয়ে যাবে। এত রাতে গ্রামের লোকজনকে বিরক্ত করা থেকে আমরা রেখে দিই‌, যাতে পরদিন সকাল বেলা দাফন করা যায়। ‘আর আমাদের জন্য একটা এসি অ্যাম্বুলেন্স দেখেন!’

কিছুক্ষণ পরে এম্বুলেন্স চলে আসে। আমার ভাতিজা ফোন দিল রাতে। ‘চাচা, থানা থেকে ফোন করছিল। বলছে যে, আপনাদের একজন আত্মীয় মারা গেছে, তার লাশ এখানে আসতেছে। কিন্তু আমাদের অনুমতি ছাড়া দাফন করবেন না’। 

যাই হোক, পরে দেখলাম যে আমার ড্রাইভার আবার এসে বলল যে, ‘স্যার, মানিকগঞ্জে আমাদের পরিচিত ড্রাইভার আছে, আমি খবর নিয়েছি। ওরা বলছে যে রাস্তার পরিবেশও ভালো না। কারণ পুলিশ যেখানে সুযোগ পাচ্ছে লাশ নিয়ে যাচ্ছে, যাতে এটা প্রচার না করতে পারে বা মিছিল-টিছিল না করতে পারে। বা ছাত্ররা যেখানে সুযোগ পাচ্ছে সেখানে ছাত্ররা লাশ নিয়ে যাচ্ছে, তারা মিছিল করতেছে লাশ নিয়ে। ফেরিও বন্ধ করে দিছে। সব মিলায়ে আমার মনে হয় যে আপনারা কুষ্টিয়া নিতে পারবেন না’।

তারমানে দুইটা জায়গা থেকে যেহেতু একই ধরনের প্রতিবন্ধকতা, তখন ওই ভাই বললেন, ‘এখন কি করবেন তাহলে?’ তখন মেয়ে এসে বলল যে, ‘যেহেতু কুষ্টিয়ায় নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, নানা-নানীর কবরের পাশে ওকে কবর দাও’। বলি যে, ‘ঠিক আছে। এখন আর কোনো অপশন নেই’। তখন ওই বন্ধুর বাবা আবার ফোন দিলেন কবরস্থানের সভাপতিকে। সে বলল, 'না, পুলিশ বলছে পোস্টমর্টেম ছাড়া কোনো লাশ এখানে দাফন করা যাবে না’।

আমি বললাম, ‘না ভাই, আমরা করব না’। তখন আমার এক বন্ধু এএসপি, আমার স্কুলের বন্ধু। ওকে ফোন দিলাম। ও তখন বরিশালে। আমি ফোন দেওয়ার পর কান্নাকাটি করতেছি। বলি, ‘আসলে এই অবস্থায় তোর কাছে কাজে ফোন দিয়েছি!’ ও বলছে, ‘বল, কী কাজ!’ তখন আমি এই ব্যাপারগুলো বললাম। ‘তো এখন, তোদের পুলিশদের কোনো আইন আছে কিনা? এখন আমি কী করতে পারি?’ তখন সে বললো যে, 'তুই তাহলে পোস্টমর্টেম করে ফেল। সুবিধা হবে'। বলি, 'সুবিধার তো দরকার নেই। মারা গেছে। পোস্টমর্টেম করে সুবিধা নিতে যাবার দরকার নেই। তোদের কোনো আইন আছে কি না সেটা বল'। তখন বলে যে, 'আমাদের একটা আইন আছে। পারিবারিক কবরস্থানে পোস্টমর্টেম ছাড়া দাফন করা যায়'। তখন আমি বললাম যে, 'হ্যাঁ, আমাদের ব্যাংক টাউনের যে নিজস্ব কবরস্থান আছে, এখানে মেম্বারদের বাইরে কাউকে দাফন করার সুযোগ দেয় না। তার মানে ব্যাংক টাউনের যারা মেম্বার তাদের এটা পারিবারিক'। সে বলল, 'তাহলে ওখানে করতে পারবি। যদি পুলিশ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে আমার সাথে যোগাযোগ করাই দিস।' আমি বলছি, ‘ঠিক আছে’। তখন ঐ ভাই যে আমার পাশে বসা, তাকে বললাম, 'ভাই আমার পুলিশ বন্ধুর সাথে কথা বললাম, সে এমন এমন পরামর্শ দিছে।' বললো, 'তাহলে তো ঠিক আছে'। আমাদের কবরস্থান, মসজিদ এবং ঈদগাহর সভাপতিকে তিনি ফোন দিলেন। সভাপতি সরাসরি বললেন, 'আমাদের ছেলে কোথাও যাবে না। এখানেই দাফন হবে।  আপনি শুধু একটা অ্যাপ্লিকেশনে সই করে দেন’। কাগজে ওনারা লিখল আমি খালি নিচে সই করে দিলাম। ততক্ষণে আমরা আসরের নামাজ পড়ে এসে বসে আছি। আমার মনে হয় যে বেশি দেরি করলে পরে আরও জটিলতা বাড়বে। তাই মাগরিবের নামাজের পরপরই জানাযা হবে। 

কারণ ওই মুহূর্তে আশেপাশে যারা খবর পেয়েছে তারা অনেকেই বলতেছে যে তারা আসতে পারতেছে না, রাস্তায় কোনো যানবাহন নেই। আর ওই ভাতিজা পরে বলতেছে, ‘আমরা আসতে চাচ্ছি কিন্তু কোনো গাড়ি রাজি হচ্ছে না। তারা বলতেছে এখন ঢাকায় যাওয়া যাবে না’। এদিকে ঢাকা শহর থেকেও কেউ আসতে পারছে না। তাহলে দেরি করা দরকার নাই। হয়তো পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হতে পারে। তাই মাগরিবের নামাজের পরেই আমরা জানাযা পড়ে ইয়ামিনকে দাফন করে দিলাম।

[সংক্ষেপিত ও পরিমার্জিত]