প্রিয় ফাইয়াজ,
আব্বা আমার, আমার কলিজা বাচ্চা, আমার চাঁদের টুকরা। কেমন আছো আব্বা? পৃথিবীর বুকে বেঁচে থাকলে আজকে তোমার জন্য একটি বিশেষ দিন ছিল। কত কত স্মৃতি আমাদের। আব্বা, আমি জানি তুমি খুব ভালো আছো। আমি তোমার জন্য কান্না করলেই মাহা আমাকে বলে, ‘মা, ভাইয়া তো শহীদ, ভাইয়া কত ভালো আছে! তুমি কাঁদো কেন?’
জানো বাবা, সেদিন বাজার করতে গিয়ে যেই চকোলেট-এর শেলফ-এর সামনে দিয়ে যাচ্ছি, আমি দেখতে পেলাম ঠিক তুমি দাঁড়িয়ে, আর ক্যাডবেরির একটা বড় Silk-এর প্যাকেট আমাকে দেখিয়ে বলছো, ‘মুনাম্মা, নিই এটা?’ বাবা আমি আর চকোলেট কিনি না, মাহা-মাইরীনও আর আবদার করে না।
সেইদিন মাইরীন মাহাকে বলছে, ‘জানো মাহা, মা আর কখনো বিরিয়ানি রাঁধবে না। ভাইয়া যে নাই, তাই।’ সত্যিই তো বাবা, আমি কী করে রান্না করব বলো? তোমাকেই তো খাওয়াতে পারব না!
আব্বা, আমি কেমন আছি জিজ্ঞেস করবে না? আমি যে কেমন আছি জানি না বাবা, শুধু আমার কিছু ভালো লাগে না। শুধু মনে হয় অনেক দূরে হাঁটতে হাঁটতে কোথাও চলে যেতে পারতাম - যেখানে কেউ নাই! চুপচাপ।
আমি যখন স্কুলে যাই বা অন্য কাজে ধানমন্ডি ২৭ নম্বর ক্রস করতে হয়, জানো বাবা আমি পুরোটা রাস্তা চোখ বন্ধ করে থাকি। সিটি হসপিটালের সামনে দিয়ে গেলেও চোখ বন্ধ করে রাখি। মনে হয় কেন আমাকে এসব পথে চলতে হচ্ছে। ধানমন্ডি ২৭ টা এখন সবচেয়ে বিভীষিকাময় আমার জন্য।
আচ্ছা বাবা, এই যে রোজার ঈদ, কুরবানির ঈদ আসবে - আমি কী করব বলো তো? আমাদের না একসাথে শপিংয়ে যাওয়ার কথা! তারপর শপিং শেষে পিৎজ্জ্বা আর কফি খেয়ে রিকশা চড়ে গল্প করতে করতে বাসায় ফেরার কথা!
আমি সারাটা দিন মনে মনে তোমার সাথে কথা বলি, তুমি যে কত কত উপদেশ দাও আমাকে! কত বড় হয়ে গেছ তুমি আব্বা!
জানো বাবা, তোমার জন্য যখন দুআ করি, তখন আমি একটু স্বার্থপর হয়ে যাই। আমি আল্লাহকে বলি, ‘আল্লাহ ফাইয়াজ কি বুঝতে পারছে, ওর জন্য আমি কত কষ্টে আছি? ওকে প্লিজ একটু বলে দিয়েন যে, তোমার মুনাম্মা ভালো নাই। তোমাকে ছাড়া বেঁচে থাকা তোমার মুনাম্মার জন্য কঠিন শাস্তি হয়ে যাচ্ছে।’ আবার মনে হয়, এটা শুনলে হয়তো তোমার মন খারাপ হবে! তখন আবার কথা বদলে ফেলি। শুধু চাই তুমি ভালো থাকো।
তুমি ইনশাআল্লাহ অনেক অনেক ভালো আছো। কারণ, যত মানুষ তোমার জন্য কেঁদেছে আর যত লোক তোমার জন্য দুআ করছে - তুমি নিশ্চয়ই জানতে পারছো। দেশের ক্রান্তিলগ্নে যেই ছেলে বীরের মতো প্রাণ দেয়, তাকে কেউ ভালো না বেসে পারে, বাবা? সমস্ত পৃথিবী তোমাকে এখন চেনে, আব্বা।
অনেক ভালোবাসি বাবা, অনেক দুআ রইল।
তোমার মুনাম্মা,
১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
[লেখিকা ফারজানা মুনমুন শহীদ ফাইয়াজের খালা। ঈষৎ পরিমার্জিত।]