প্রশ্ন: সোশ্যাল মিডিয়ায় দিনের অনেক সময় নষ্ট করি। বারবার ভাবি সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় কমিয়ে দিব, কিন্তু হচ্ছে না। পড়াশোনায়ও বেশিক্ষণ মনোযোগ দিতে পারছি না। মন শুধু বারবার ফোনের দিকে চলে যায়। রেজাল্টও খারাপ হচ্ছে পরীক্ষায়। মনোবিদ ভাইয়া, কী করব?
উত্তর:
বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই দিনের একটা বড় সময় ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব বা টিকটকে কাটিয়ে ফেলি। তুমি বলেছ, বারবার চেষ্টা করেও সোশ্যাল মিডিয়ার সময় কমাতে পারছ না এবং পড়াশোনায়ও মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। এটি এক ধরনের ডিজিটাল আসক্তির লক্ষণ।
সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের মস্তিষ্কে তাৎক্ষণিক আনন্দ (ডোপামিন রিলিজ) দেয়। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে তা পড়াশোনার মতো মনোযোগসাপেক্ষ কাজকে বিরক্তিকর করে তোলে। এছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়ার অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে হতাশা, উদ্বিগ্নতা, হীনমন্যতা, ঘুমের সমস্যার মতো মানসিক রোগ দেখা দিতে পারে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কিছু সহজ কৌশল:
১. নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা—প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় (৩০ মিনিট) ঠিক করে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করো।
২. স্টাডি রুটিন তৈরি করা—ছোট ছোট সময় ভাগ করে দৈনিক রুটিন নির্ধারণ করো।
৩. ফোন দূরে রাখো—পড়ার সময় ফোন সাইলেন্ট করে আলাদা রুমে রাখো।
৪. অ্যাপ নিয়ন্ত্রণ—ফোনে স্ক্রিন টাইম বা অ্যাপ ব্লকার ব্যবহার করো।
৫. খেলাধুলা ও সামাজিকতা—সবুজ মাঠে খেলা এবং বাস্তব জীবনের সামাজিক সম্পর্কগুলোর প্রতি যত্নবান হও।
ইসলামে সময়ের গুরুত্ব অপরিসীম। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সূরা আসরে বলেন, ‘শপথ সময়ের, নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতির মধ্যে রয়েছে।’ অতএব সময়ের অপচয় মানে হলো জীবনের অপচয়। এ থেকে বাঁচতে করণীয়:
১. নিয়ত ও আত্মনিয়ন্ত্রণ: আমাদের নফস বারবার আনন্দের দিকে ঝুঁকে পড়ে। তাই দরকার মুজাহাদা—অর্থাৎ নিজের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে থাকা।
২. দুআ ও ইস্তিগফার: বারবার সোশ্যাল মিডিয়ার দিকে মন গেলে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে—’ইয়া-মুক্কালিবাল কুলুব, সাব্বিত ক্বালবি আলা দ্বীনিক।’
৩. যিকির ও সালাত: মনোযোগ বাড়াতে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, ছোট ছোট যিকির ও মাসনুন দুআর অভ্যাস গড়ে তোলো।
৫. তাকওয়া: প্রতিটি কাজ এমনভাবে করা যেন আল্লাহ দেখছেন—এই চেতনা রাখা।
৬. ইসলামের সৌন্দর্য্য: অনর্থক কথা এবং কাজ থেকে বিরত থাকা।
ডা. মো. মাসুদ রানা
এমবিবিএস, বিসিএস, এমসিপিএস, এমডি
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী